প্রধান নদী ও গতিপথ ?

0
ভারতের প্রধান নদী ও তাদের গতিপথ বর্ণনা করো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই উপযোগী এবং এই প্রশ্নটি তারা গুরত্ব সহকারে অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। ভারতের প্রধান নদী ও তাদের গতিপথ এই প্রশ্নটি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

ভারতের প্রধান নদী ও তাদের গতিপথ বর্ণনা করো ?

ভারতে রয়েছে শত শত নদ-নদী। এর মধ্যে তোমাদের পাঠ্যসূচির অন্তর্গত নদীগুলি সম্পর্কে তোমরা জেনে নাও-

  1. গঙ্গানদী: ভারতের দীর্ঘতম ও জাতীয় নদী হলো গঙ্গা। এর দৈর্ঘ্য 2,510 কিমি। এটি উত্তর ভারতের পূর্ববাহিনী নদী। গঙ্গা নদীর তিনটি গতিপথ রয়েছে। যেমন-
    • গঙ্গার উচ্চগতি বা পার্বত্যপ্রবাহ: ভাগীরথী, অলকানন্দা ও মন্দাকিনী—এই তিনটি নদীর মিলিত স্রোতই গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়েছে। একবার দেখে নেওয়া যাক তিনটি স্রোতধারা কীভাবে গঙ্গা হলো – ভাগীরথী নদী গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। অলকানন্দা সৃষ্টি হয়েছে অলকাপুরী ও সতোপন্থ হিমবাহ থেকে। মন্দাকিনী সৃষ্টি হয়েছে কেদারনাথের কাছে ঘোড়াবাড়ি হিমবাহ থেকেও দেবপ্রয়াগের কাছে ভাগীরথীতে এসে মিলিত হয়েছে। অলকানন্দা এবং রুদ্রপ্রয়াগের কাছে মিলিত হয়েছে মন্দাকিনী।
    • গঙ্গার মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ: হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি। এখানে গঙ্গার প্রধান উপনদী হলো গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি। 
    • গঙ্গার নিম্নগতি বা বদ্বীপ গতি: পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান থেকে মোহানা পর্যন্ত গঙ্গার নিম্নগতি। পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান-গিরিয়ার কাছে এসে গঙ্গা দু-ভাগে ভাগ হয়েছে ।  প্রবাহটি পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।   অপ্রধান শাখাটি প্রথমে ভাগীরথী এবং নবদ্বীপের পর হুগলি নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
  2. সিন্ধুনদ: উত্তর ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদী হলো সিন্ধু। তিব্বতের মানস সরোবরের 100 কিমি উত্তরে অবস্থিত সেনগগে খাবার প্রস্রবণ থেকে সিন্ধুনদের উৎপত্তি। এর মোট দৈর্ঘ্য 2,880 কিমি। ভারতে মাত্র 809 কিমি এর প্রবাহপথ। সিন্ধুনদ উৎসস্থল থেকে হিমালয় পর্বতের উত্তর দিকে ঘুরে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে বুঞ্জি শহরের কাছে 5, 200 মিটার গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে আরবসাগরে পতিত হয়েছে। সিন্ধুনদের বামতটের প্রধান উপনদীগুলি হলো—বিতস্তা, বিপাশা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী ও শতদ্রু ।
  3. ব্রহ্মপুত্র নদ: উত্তর ভারতের পূর্ববাহিনী নদী হলো ব্রক্ষ্মপুত্র। এটি তিব্বত মালভূমির চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য 2,900 কিমি। ভারতে মাত্র 885 কিমি এর প্রবাহপথ। ব্রহ্মপুত্র উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বত মালভূমির ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পূর্বদিকে হিমালয়ের প্রায় সমান্তরালে 1,700 কিমি প্রবাহিত হয়েছে। তারপর হঠাৎ দক্ষিণদিকে বাঁক নিয়ে অরুণাচলপ্রদেশে প্রবেশ করেছে এবং দিহাং বা সিয়াং নামে প্রবাহিত হয়েছে। অসম উপত্যকায় দিবাং ও লোহিত নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর তিনটি নদীর মিলিত স্রোতই ‘ব্রহ্মপুত্র’ নামে পরিচিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণমুখী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং যমুনা নাম নিয়ে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আবার যমুনা ও পদ্মার মিলিত প্রবাহ ‘মেঘনা’ নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
  4. নর্মদা নদী: দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে নর্মদা হলোদীর্ঘতম ও বৃহত্তম। এই নদী মৈকাল (মহাকাল) পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য 1,312 কিমি। উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত (পূর্বনাম কাম্বে) উপসাগরে পড়েছে। গ্রস্ত উপত্যকায় প্রবেশেরমুখে এই নদী বিখ্যাত ধুঁয়াধার জলপ্রপাত ও মার্বেল রকসৃষ্টি করেছে। প্রধান উপনদীগুলিহলো হিরণ, বর্ণা প্রভৃতি। এর বদ্বীপ নেই।
  5. তাপী নদী: দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদী হলো তাপী। মহাদেও পর্বতের মূলতাই উচ্চভূমি থেকে এই নদী উৎপন্ন হয়েছে। এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য 730 কিমি। উৎপত্তিস্থল থেকে উৎপত্তি লাভ করে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। পূর্ণা, গির্ণা হলো এর প্রধান উপনদী এর বদ্বীপ নেই। 
  6. মহানদী: মহানদী হলো দক্ষিণ ভারতের পূর্ববাহিনী নদী। ছত্তিশগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার সিহওয়া পাহাড় থেকে এর উৎপত্তি। এর মোট দৈর্ঘ্য 890 কিমি। মহানদী ছত্তিশগড় রাজ্যে উৎপন্ন হয়ে, পরে ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং মোহানায় (চিল্কা হ্রদ অবস্থিত) বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। হাসদো, ইবও টেল এর প্রধান উপনদী ।
  7. গোদাবরী: দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম ও দীর্ঘতম নদী হলো গোদাবরী। পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্রিম্বক শৃঙ্গ থেকে এর উৎপত্তি। এর মোট দৈর্ঘ্য 1,456 কিমি। উৎসস্থল থেকে উৎপত্তি লাভ করে মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বদ্বীপ অঞ্চলে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে – (ক) গৌতমী গোদাবরী ও (খ)বশিষ্ঠ গোদাবরী। তারপর বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। গোদাবরীকে দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা বলা হয়। প্রধান উপনদী হলো ইন্দ্রাবতী, পেনগঙ্গা প্রভৃতি।
  8. কৃষ্ণা নদী: দক্ষিণ ভারতের পূর্ববাহিনী নদী হলো কৃষ্ণা। এটি পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য 1,400 কিমি। কৃষ্ণা উৎসস্থল থেকে উৎপত্তি লাভ করে মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ভীমা, মুসি, ঘাটপ্রভা, তুঙ্গভদ্রা কৃয়ার প্রধান উপনদী। 
  9. কাবেরী নদী: দক্ষিণ ভারতের পূর্ববাহিনী নদী হলো কাবেরী। পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রত্নগিরি থেকে এর উৎপত্তি। এর মোট দৈর্ঘ্য 400 কিমি। ব্রহ্মগিরি থেকে উৎপত্তি লাভ করে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ও মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করে কাবেরী বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর গতিপথে শিবসমুদ্রম ও হোগেনাকল জলপ্রপাত ও শ্রীরাম দ্বীপ অবস্থিত। হেমাবতী, শিমসা, কব্বানী, ভবানী, অমরাবতী প্রভৃতি হলো কাবেরীর প্রধান উপনদী ।

উপরের প্রস্নোধৃত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। এই প্রশ্নের বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।