কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের পরিচয় ?

0
পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

কুটির শিল্প:

সংজ্ঞা:

নিজ গৃহে স্বল্প মূলধনে পারিবারিক শ্রমের মাধ্যমে সাধারণ যন্ত্রপাতির দ্বারা নিজের হাতে শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করা হলে তাকে কুটির শিল্প বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গে যেসব কুটির শিল্প আছে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-

  1. হস্তচালিত তাঁত শিল্প: পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক বৃহত্তম কুটির শিল্প হল হস্তচালিত তাঁশিল্প, পশ্চিমবঙ্গে আনুমানিক সাড়ে তিন লক্ষের বেশি তাঁতকল রয়েছে এবং এগুলিতে মোট সাড়ে ছয়লক্ষের বেশি মানুষ আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত। হস্তচালিত তাঁত শিল্পে শান্তিপুর, ফুলিয়া, বিষ্ণুপুর, ধনেখালি, ফারাসডাঙা, বেগমপুর প্রভৃতি স্থান প্রসিদ্ধ।
  2. মৃৎশিল্প ও টেরাকোটা: পশ্চিমবঙ্গের এক এক জায়গায় এক এক ধরনের মৃৎশিল্পের উন্নতি ঘটেছে। যেমন—
    • নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মাটির পুতুল তৈরির জন্য বিখ্যাত।
    • বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পোড়া মাটির পুতুল ও মূর্তি তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ।
    • কলকাতার কুমোরটুলির মৃৎ প্রতিমা শিল্পের জন্য খ্যাত।
  3. ধাতু শিল্প: কাঁসা-পেতলের থালা, বাসন, ঘটি, বাটি, গ্লাস, দেবদেবীর মূর্তি, ঘর সাজানোর জিনিস প্রভৃতি তৈরির জন্য বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, ঘাটাল, চণ্ডিপুর প্রসিদ্ধ।
  4. রেশম শিল্প: মালদা ও মুর্শিদাবাদ রেশম শিল্পের জন্য সারা ভারতে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে।
  5. বাঁশ ও ইক্ষুর কাজ: বাঁশ ও বাঁশের কঞ্চি থেকে ঝুড়ি, ডালা, কুলো, ঘর সাজানোর সৌখিন দ্রব্য প্রভৃতি তৈরি করা হয়। এই প্রকার কুটির শিল্প পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই রয়েছে। এছাড়া আখের ছিবড়ে দিয়ে নানা কারুকার্য করে তাতে রঙ করে বিভিন্ন দ্রব্য তৈরির কাজ পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলাতেই গড়ে উঠেছে।
  6. পাটের তৈরি দ্রব্য: কাঁচাপাটকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলিতে কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। পাটের তত্ত্ব দিয়ে নানান প্রকারের কার্পেট, ব্যাগ, ঘর সাজানোর জিনিস প্রভৃতি তৈরি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কালিগ পাটের তত্ত্ব বুনন ও রং করার জন্য প্রসিদ্ধ।
  7. স্বর্ণশিল্প: পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই স্বর্ণশিল্প দেখা যায়। কলকাতার বউবাজার, সিঁথি, দমদম প্রভৃতি জায়গা স্বর্ণশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ।
  8. প্রকাশনা শিল্প: কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে এই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র শিল্প:

কুটির শিল্পের পরবর্তী ধাপ হল ক্ষুদ্রায়ন শিল্প। 1950 সালে ভারতের ফিসক্যাল কমিশন ক্ষুদ্রশিল্পের একটি সংজ্ঞা দেয়। কমিশনের মতে, শিল্পকেন্দ্রে 10-50 জন শ্রমিক কাজ করলে তা ক্ষুদ্র শিল্প বলে গণ্য হবে। যে সব শিল্প ইউনিট-এ শিল্প দ্রব্যাদির উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া থাকে এবং শিল্পকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় কারখানা নির্মাণ ও যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য মোট খরচের পরিমাণ 10 লক্ষ 25 লক্ষ টাকার মধ্যে থাকে তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে।

  1. যন্ত্রচালিত তাঁত শিল্প: এটি একটি ক্ষুদ্র শিল্প। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় 5,400 যন্ত্রচালিত তাঁত কারখানা রয়েছে। এদের মধ্যে 2,291 টি হোসিয়ারি ও 713 টি নথিভুক্ত তৈরির কারখানা।
  2. চর্মশিল্প: পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত চর্মজাত দ্রব্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জুতো, পোশাক, ব্যাগ, বাদ্যযন্ত্র প্রভৃতি। পশ্চিমবঙ্গে 538 টি ট্যানারি রয়েছে এবং এগুলিতে প্রায় 20 লক্ষ মানুষ নিযুক্ত। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স হল এরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ চর্ম শিল্প ইউনিট।
  3. রেডিমেট পোশাক: পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকার শিল্পের দ্রুত উন্নতি ঘটছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই এই প্রকার শিল্প গড়ে উঠেছে।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য বা পরে অধ্যায়ন করার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।