জলবায়ু নিয়ন্ত্রক সমূহ ?

0
ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রক সমূহ আলোচনা করো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই উপযোগী এবং এই প্রশ্নটি তারা গুরত্ব সহকারে অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রক সমূহ এই প্রশ্নটি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রক সমূহ আলোচনা করো ?

ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহ:

ভারত বিশাল দেশ তাই ভারতে অক্ষাংশগত প্রভেদ, উচ্চতার তারতম্যও বেশি। সমুদ্র থেকে দূরত্ব বেশি বহুস্থানের। পার্থক্য রয়েছে মৃত্তিকা, বনভূমি, বায়ুপ্রবাহের প্রকৃতির। ফলে জলবায়ুর বৈচিত্র্যও বেশি। ভারতীয় জলবায়ুর এরূপ বৈচিত্র্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হলো-

  1.  অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি: ভারতের দক্ষিণাংশটি উপদ্বীপীয়। দু-দিকে ভারত মহাসাগরের দুটি প্রসারিত অংশ- আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর। ভারতের দক্ষিণ থেকে উত্তরে অক্ষাংশগত ব্যবধান বেশি, দক্ষিণে 8°04′ দক্ষিণ থেকে উত্তরে 37:06´ উত্তর সমাক্ষরেখা পর্যন্ত ভারত বিস্তৃত। ফলে দক্ষিণে লম্ব সূর্যকিরণের (92°-85* কোণে) জন্য নিরক্ষীয় (তামিলনাড়ু ও কেরালা) এবং উত্তরে কিছুটা হেলানো (67-70″ কোণে) সূর্যকিরণের জন্য নাতিশীতোয় প্রকৃতির (পাঞ্জাব ও হরিয়ানা) জলবায়ু দেখা যায় ।
  2.  জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূপ্রকৃতির ভূমিকা: ভারতে পর্বত, মালভূমি, সমভূমি সকল প্রকার ভূপ্রকৃতিই দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যে স্থান যত উচ্চতায় অবস্থিত তার উষ্ণতা ততই কমতে থাকে। তাই ভারতের পার্বত্য অঞ্চলগুলির উষ্ণতা সমভূমি অঞ্চল থেকে কম হয়। যেমন— গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল থেকে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের উষ্ণতা কম হয়। ভারতের উপকূলীয় সমভূমির সর্বাধিক উচ্চতা 20 মিটারের মতো। আর উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের গড় উচ্চতা 6,000 মিটার।
  3. জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক হিসেবে সমুদ্র সান্নিধ্যের প্রভাব: সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চল, উপকূল অঞ্চল সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই প্রভাব সমুদ্র থেকে 150-200 কিমি পর্যন্ত থাকে। ফলে সমুদ্র নিকটবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়। অন্যদিকে সমুদ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র ও স্থলবায়ুর প্রভাব নেই বলে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হয়। তাই মুম্বাই, গোয়া, কোচিন প্রভৃতি স্থানগুলি উপকূল অঞ্চলে অবস্থিত বলে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা কম। অন্যদিকে দূরে অবস্থানের জন্য পাটনা, দিল্লি প্রভৃতি স্থানে শীত ও গ্রীষ্ম উভয়েরই তীব্রতা বেশি।
  4. জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক হিসেবে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: মৌসুমি একটি আরবি শব্দ ‘মৌসম’ থেকে এসেছে ; যার অর্থ ঋতু। নির্দিষ্ট ঋতু বা সময়ে সময়ে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। তাই একে ঋতু বায়ু বা সাময়িক বায়ু বলে। এই বায়ু ভারতের জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। যেমন— ঋতুর নিয়ন্ত্রণ : ভারতে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ফলে আর্দ্র গ্রীষ্ম ঋতু বিরাজ করে। নভেম্বর-জানুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ফলে এই সময় ভারতে শুষ্ক শীতকাল বিরাজ করে।
  5. জলবায়ুর ওপর ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব: ভারতের পশ্চিম ও বিশেষ করে পূর্ব উপকূলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (সাইক্লোন) দেখা যায়। প্রায় গ্রীষ্মে স্থলভাগ জুড়ে প্রবল নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন সমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঘনীভূত হয়ে উপকূল অঞ্চলে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি ও তুফান সৃষ্টি করে। আবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। ফলে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের উপকূল জেলাগুলিতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়। পশ্চিমবঙ্গে একে আশ্বিনের ঝড় বলে। শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানের পূর্বাংশ, জম্মু-কাশ্মীরে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত (পরিমাণ হালকা, 20–40 সেমি) হয় এবং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়। একে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারত ও ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের প্রভাবে পূর্ব উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু প্রভাবিত হয়। ভারতের অন্যত্র এই দুই বিষয়ের তেমন প্রভাব পড়ে না।
  6. জলবায়ুর ওপর এল নিনোর প্রভাব: দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু ও চিলি উপকূলে এক অস্থির ও অনির্দিষ্ট উষু সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়, একে এল নিনো বলে। এল নিনোর অর্থ ‘দুরন্ত বালক’ বা ‘জিশু খ্রিস্ট’। এই সমুদ্রস্রোতটি পৃথিবীজুড়ে জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। ভারতের জলবায়ু এল নিনো দ্বারা প্রভাবিত হয়। যে বছর এল নিনো প্রবাহিত হয় সে বছর পুবালি জেটবায়ু দুর্বল হয়। ফলে ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ অন্যান্য বছরের মতো শক্তিশালী হয় না। ফলে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। মৌসুমি বায়ু ভারতে বিলম্বে আসে। মৌসুমি বায়ুর গতি ও বাহিত জলীয় বাষ্পও কম হয়। তখন ভারতে মৌসুমি বৃষ্টি কম হয়। খরার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই কারণে 2014 খ্রিস্টাব্দে ভারতে 260 টি জেলাতে খরার সৃষ্টি হয়েছিল।
  7. জলবায়ুর ওপর লা-নিনার প্রভাব: মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রজলের স্বাভাবিক তাপমাত্রার হ্রাস পাওয়াকে লা-নিনা বলে। লা-নিনা এক স্পেনীয় শব্দ ; যার অর্থ “শিশু মেরি’ বা ‘সুহৃদয় মেয়ে’। লা-নিনার ফলে সমুদ্রজলের ঊর্ধ্বগমন ঘটে। ফলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়। লা-নিনা প্রবাহের সময় বা বছরে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বাড়ে। ফলে ভারতের দক্ষিণাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। লা-নিনার বছরগুলিতে ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। ফলে সেই বছর ভারতের বেশ কিছু অংশে বন্যা দেখা দেয় ও পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামে।

উপরের প্রস্নোধৃত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। এই প্রশ্নের বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।