পৃথিবীর গতি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল অবধি পৃথিবীর গতি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

0
প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল অবধি পৃথিবীর গতি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই উপযোগী এই প্রশ্নটি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। পৃথিবীর গতি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ এই প্রশ্নটি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

 প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল অবধি পৃথিবীর গতি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন পর্যবেক্ষণসমূহ :

প্রাচীনকালের মানুষের কাছে এই মহাবিশ্ব ছিল এক বন্ধ, সীমিত ও খুবই ছোট্টো এলাকা। আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আদিমকাল থেকে মানুষ মনে মনে কত যে প্রশ্নের জাল বুনেছে আর বিস্মিত হয়েছে তার ঠিক নেই। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি পৃথিবীর গতি সম্বন্ধে যে সব পর্যবেক্ষণগুলি ঘটেছে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে দেওয়া হল

ব্যাবিলনীয়দের পর্যবেক্ষণ: 

খ্রিঃ পূঃ 1600 সালের দিকে ব্যাবিলনীয়রা সর্বপ্রথম তারা বা নক্ষত্রের তালিকা তৈরি করতে থাকেন এবং গ্রহগুলি কীভাবে চলাফেরা করে তার হিসাব রাখতে শুরু করেছিলেন। ব্যাবিলনের জ্যোতির্বিদরা ছিলেন পুরোহিত। তাই তাঁরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে ধর্মীয় ভাবাবেগের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের বর্ণনা দিয়েছিলেন। তাঁরা মনে করতেন, এই বিশ্বের সৃষ্টি, বিন্যাস চালান দেবতারা। গ্রহ-নক্ষত্রগুলি কেন ঘুরছে, কেন তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করেননি। তাঁরা ছিলেন কেবল পর্যবেক্ষক ও বর্ণনাকারী।

গ্রিকদের পর্যবেক্ষণ:

বিজ্ঞানে কেবল পর্যবেক্ষণ ও বর্ণনা করলেই চলে না, তত্ত্ব তৈরি করে তার যুক্তি দিতে হয়। এই তত্ত্ব তৈরির কাজ প্রথম শুরু করেছিলেন গ্রিক পণ্ডিতেরা। নীচে পৃথিবীর গতি সম্পর্কিত গ্রিক পণ্ডিতদের পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হল:

পিথাগোরাস:

জ্যামিতিবিদ পিথাগোরাস-ই সবার আগে প্রস্তাব করেন যে পৃথিবী গোলাকার ও বিশ্বের কেন্দ্র।

পিথাগোরাস-এর অনুসারী পণ্ডিতেরা:

পিথাগোরাসের অনুসারীরা পিথাগোরাসের বিশ্ব কাঠামোটিকে অদ্ভুতভাবে। বদলে দিয়ে তৈরি করেন এমন এক গোলাকার বিশ্বকাঠামো, যার মাঝখানে রয়েছে এক কেন্দ্রীয় আগুন। তবে ওই আগুনটি সূর্য নয়, একটি কল্পিত আগুন। এই আগুনকে ঘিরে ঘুরছে পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য আর গ্রহগুলি। কীভাবে ঘুরছে? এদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে একটি করে গোলক। আর একেবারে বাইরে এদেরকে ঘিরে রয়েছে একটি নক্ষত্র গোলক। এই নক্ষত্র গোলকের ওপর স্থিরভাবে লাগানো রয়েছে নক্ষত্রসমূহ। তাঁদের মতে, এই নক্ষত্র গোলকটি ভিতরের অন্য গোলকগুলিকে নিয়ে প্রত্যেকদিন পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘোরে।

ইউডোক্সাস :

তিনি সৌরজগতের একটি মডেল তৈরি করে দেখান, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য, চন্দ্র, পাঁচটি গ্রহ এবং নক্ষত্রগুলিকে পৃথিবীর চারপাশে 27টি কেন্দ্রে গোলকগুলি বিভিন্ন গতিতে ও বিভিন্ন ভাবে হেলে থেকে আবর্তন করে। 

ক্যালিপ্পাস:

ক্যালিপ্পাস ইউডোক্সীয় মডেলটিতে আরও সাতটি নিজেদের কেন্দ্রে আবর্তনকারী গোলক যুক্ত করেন। ইউডোক্সাস ও ক্যালিয়াস বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের গতি সম্বন্ধীয় একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

অ্যারিস্টারকাস (Aristarchus):

অ্যারিস্টারকাস-ই প্রথম প্রস্তাব করেন যে বিশ্বের কেন্দ্র পৃথিবী নয়, সূর্য। অ্যারিস্টারকাস সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের প্রথম প্রস্তাবকারী। এই প্রস্তাব তিনি করেছিলেন কোপারনিকাসের 17 শো বছর আগে। তাঁর প্রস্তাব সেই সময়ে গৃহীত হয়নি। বরং আক্রান্ত হয়েছে। তাঁর বিরোধীরা যুক্তি দেয় যে পৃথিবী ঘুরতেই পারে না, ঘুরলে মানুষ এক জায়গায় লাফ দিলে পড়তো অন্য জায়গায় গিয়ে। তাদের যুক্তি যেহেতু অ্যারিস্টটল বলেছেন পৃথিবী ঘোরে না তাই পৃথিবী না ঘোরাই স্বাভাবিক। অ্যারিস্টারকাস-এর এই অসামান্য প্রস্তাব হারিয়ে যায় প্রতাপশালী অ্যারিস্টটলের ভুল দর্শনের কাছে।

ক্লডিয়াস টলেমি:

তিনি মনে করতেন, পৃথিবী রয়েছে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে। আর সূর্য ও অন্যান্য মহাজাগতিক সদস্যরা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। টলেমির মতে, তো গুলি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে উপকেন্দ্রিকভাবে (Epicyclic) ভাবে আবর্তন করে চলেছে।

ইউরোপের মধ্যযুগ :

500-1500 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খ্রিস্টধর্মের উত্থান জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতির পথকে আটকে দেয় এবং জ্ঞানকে ধ্বংস করে। প্রায় এক হাজার বছর ধরে চলে অজ্ঞানতার অন্ধকার। একেই ইউরোপের মধ্যযুগ বলা হয়।

নবজাগরণের যুগ ও পৃথিবীর গতি সম্বন্ধীয় নতুন ও সঠিক পর্যবেক্ষণ :

ইউরোপে জ্ঞানের শিখা জ্বলতে শুরু করে ষোড়শ শতকে। কলম্বাস, ম্যাজেলান ও অন্যান্য নাবিকদের সমুদ্রযাত্রার ফলে বদলে গেল পৃথিবীর অনেক রহস্য। শুরু হয় পৃথিবীর গতি সম্বন্ধে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা। যাঁদের পর্যবেক্ষণে পৃথিবীর গতি সম্বন্ধে নতুন নতুন রহস্য উদ্‌ঘাটিত হতে থাকলো তাঁদের অবদানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে দেওয়া হল

নিকোলাস কোপারনিকাস :

ষোড়শ শতকে মহাবিশ্বের (সৌরজগতের) গঠন নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত এক নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করলেন নিকোলাস কোপারনিকাস। তাঁর এই নতুন তত্ত্বের মূল কথা হল—বুধ, শুক্র, মঙ্গল এবং অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, পৃথিবীকে নয়। অর্থাৎ সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তিনি আরো বলেন, পৃথিবী নিজ মেরুরেখার উপর দিনে একবার আবর্তন করে।

টাইকো ব্রাহে:

অ্যারিস্টটল ও টলেমি বলে যান যে, আকাশ বা নক্ষত্রমণ্ডল হল এক বিশুদ্ধ এলাকা, সেখানে কোনোই পরিবর্তন ঘটে না। টাইকো ব্রাহে তাঁর বিখ্যাত ‘দ্য স্টেলানোভা’ বা ‘নতুন তারা’ বইতে লিখে গিয়েছিলেন যে, “আকাশমণ্ডলই হল সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনশীল’। টাইকোর কথা এখন সত্যি বলে প্রমাণিত হচ্ছে।

জিওর্দানো ব্রুনো:

ব্রুনো দুঃসাহসিক এবং অসাধারণ বৈজ্ঞানিক উক্তি করেছিলেন যে, “শুধু পৃথিবী কেন, সূর্যও নিজের অক্ষের ওপরে ঘোরে।” ব্রুনোর মৃত্যুর অনেক দশক পরে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়। তিনি বেশ জোরের সঙ্গে বলেছিলেন যে, “সৌরজগতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে অনেক গ্রহ, আরও নতুন নতুন গ্রহ আবিষ্কৃত হবে যাদের কথা পৃথিবীতে অজানা।” ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন ব্রুনো কেবলমাত্র বুদ্ধির দ্বারা যে সব জিনিস তিনি বুঝেছিলেন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সেগুলি পরে আবিষ্কৃত ও সত্য প্রমাণিত হয়েছিল।

গ্যালিলিও গ্যালিলেই :

তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করে পৃথিবীর গতি সম্পর্কে কোপারনিকাসের ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন।

জোহানস কেপলার:

তিনি গ্রহদের গতির যে সূত্র দেন তাদের মধ্যে প্রধান হল – সৌরজগতের নাভিতে থাকা সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকটি গ্রহ উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।

আইজ্যাক নিউটন:

নিউটন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে, সূর্যের যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি রয়েছে তার কারণেই প্রত্যেকটি গ্রহ তাদের নিজেদের কক্ষপথে অবস্থান করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। প্রশ্নের বিষয়টি নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য বা পরে অধ্যায়ন করার ক্ষেত্রে সরাসরি (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।