আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই বিষয়টি ভালো ভাবে অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্পের সমস্যা এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্পের সমস্যা আলােচনা করো ?
লৌহ ইস্পাত শিল্পের সমস্যা
ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রধান সমস্যা গুলি হল
- উৎকৃষ্ট মানের কোকিং কয়লার অভাবঃ ভারতে উন্নত মানের কোকিং কয়লার যথেষ্ট অভাব রয়েছে । বর্তমানে ভারতে উত্তোলিত কোকিং কয়লার ছাইয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ । তাই শিল্পজাত পণ্যের গুণগত মান এবং উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায় । এর ফলে ভারতকে প্রতি বছর উচ্চ মানের কোকিং কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় ।
- কাঁচামালের কেন্দ্রীভূত অবস্থানঃ ভারতের অধিকাংশ আকরিক লােহা ও কয়লার খনি ভারতের পূর্বদিকে ছােটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত । তাই এখানেই এই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে এবং অন্যান্য শিল্পকেন্দ্রে কাঁচামাল আনার খরচ অনেক বেশি ।
- বিদ্যুৎশক্তির অভাবঃ অন্যান্য শিল্পের মতাে বিদ্যুৎশক্তির অভাব লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে । যেমন সাম্প্রতিককালে দামােদর উপত্যকা সংস্থা থেকে অপ্রতুল বিদ্যুৎশক্তির যােগানের কারণে SAIL- এর অধীনে থাকা শিল্পকেন্দ্রগুলিতে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটেছে এবং হ্রাস পেয়েছে ।
- উৎপাদন ক্ষমতা পূর্ণমাত্রায় ব্যবহারের অভাবঃ ভারতের বৃহদায়তন লৌহ ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রটির প্রতিটির মােট উৎপাদন ক্ষমতার একটি বড় অংশ অব্যবহৃত থেকে যায় , ফলে মােট উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায় ।
- পুরনাে মেশিনপত্রের ব্যবহারঃ অধিকাংশ লৌহ ও ইস্পাত কেন্দ্রে পুরনাে মেশিনপত্র ব্যবহার করে উৎপাদন হয় , যার ফলে শুধু উৎপাদনের পরিমাণ কম হয় না , মানও বেশ খারাপ হয়ে থাকে ।
- অনুন্নত প্রযুক্তিবিদ্যাঃ অনুন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার জন্য শিল্পদ্রব্যের উৎপাদনে কাঁচামাল এবং শক্তি – দুটিই বেশি খরচ হয় , ফলে উৎপাদনের খরচ বেশি হয় এবং শিল্পজাত দ্রব্যের দামও বেড়ে যায় ।
- মান নিয়ন্ত্রণের অভাবঃ ভারতের ইস্পাত শিল্পে মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই , তাই বিশ্বের বাজারে এর তেমন কোনাে চাহিদাও নেই ।
- কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিঃ এই শিল্পের যাবতীয় কাঁচামাল এবং শক্তিসম্পদের মূল্য অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে ।
- অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ ও ত্রুটিপূর্ণ পরিচালনাঃ সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন শিল্পকেন্দ্রগুলিতে নীতি নির্ধারণে যথেষ্ট দেরি হয় । তাছাড়া অনেক পরিকল্পনা ত্রুটিপূর্ণও থাকে । তাই এই শিল্পকেন্দ্রের উৎপাদন লাভজনক হওয়ার বদলে অনেক সময় ব্যয়বহুল হয়ে যায় ।
- শ্রমিক অসন্তোষঃ ভারতে সুলভ শ্রমিকের প্রাচুর্য থাকলেও দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে । তাছাড়া কেন্দ্রগুলিতে শ্রমিকের আধিক্য আছে এবং নানা কারণে শ্রমিক অসন্তোষের ফলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে ।
সমস্যার সমাধান
ভারতের লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসাবে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে । যেমন
- লৌহ ও ইস্পাত কেন্দ্রগুলির আধুনিকীকরণ ও উৎপাদন সম্প্রসারণের জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ।
- ভারত সরকার নিজের অধীনস্থ লৌহ ও ইস্পাত কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ।
- অলাভজনক কেন্দ্রগুলির পরিচালন ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে ।
- উৎপাদন বাড়ানাের জন্য সরকার বেসরকারি মালিকানায় দেশের বহু জায়গায় ‘ মিনি ’ ইস্পাতকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিচ্ছে ।
- এছাড়া সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ সুনিশ্চিত করা এবং শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করারও চেষ্টা করছে ।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা
বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলেও ভারতে লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল , কারণ
- লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল ও শক্তি সম্পদ ভারতে পাওয়া যায় ।
- ভারতে যথেষ্ট উন্নত সড়কপথ ও রেলপথের যােগাযােগ ব্যবস্থা আছে ।
- ভারতের মতাে একটি বিপুল জনসংখ্যার দেশে অভ্যন্তরীণ বাজারে একটি ব্যাপক চাহিদা আছেই । এছাড়াও দক্ষিণ – পূর্ব এবং পশ্চিম এশিয়াতেও ইস্পাতজাত দ্রব্যের বিশাল বাজার রয়েছে ।
- ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার মাশুল সমীকরণ নীতি তুলে নেওয়ার ফলে ভারতীয় ইস্পাত শিল্পের যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে ।
উপরোক্ত অংশ নিয়ে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কোনো সাহায্য হলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে তাদের কেও সাহায্য করুন। প্রশ্নটি নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।
