তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতি লাভের কারণ ?

0
পশ্চিমবঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতি লাভের কারণগুলি উল্লেখ করো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতি লাভের কারণ এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতি লাভের কারণগুলি উল্লেখ করো ?

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে উন্নতি লাভের প্রধান কারণসমূহ:

পশ্চিমবঙ্গে নিম্নলিখিত কারণগুলির একত্র সমাবেশ ঘটায় তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে অতি দ্রুত উন্নতি ঘটতে সাহায্য করেছে।

  1. উন্নত মেধাসম্পন্ন মানব সম্পদ: মানুষের জ্ঞান হল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মূল সম্পদ। উন্নত মেধাকে কাজে লাগিয়ে এই শিল্প গড়ে তোলা হয়। পশ্চিমবঙ্গে উন্নত মেধাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বিকাশে সুবিধা হয়েছে।
  2. কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র: কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অন্যলে বহু আগে থেকেই ছিল কয়েকটি অতি উন্নতমানের শিক্ষাকেন্দ্র। যেমন – খড়গপুর, ITI, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, দুর্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কেন্দ্রে প্রভৃতি। বিগত দেড়-দু দশকে এই রাজ্যে গড়ে উঠেছে আরো বেশ কিছু কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে উন্নতি ও দক্ষ মানব সম্পদের জোগানে অভাব হয় না।
  3. সুলভ মানব সম্পদের জোগান: পশ্চিমবঙ্গের লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় ও অতি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এবং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি থাকায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে খুব কম বেতনে দুই শিফটে কাজ করার জন্য যে অসংখ্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয় তার কোনো অভাব হয় না।
  4. উদার অর্থনৈতিক নীতি: ভারত সরকারের গৃহীত সম্প্রতিক উদার অর্থনৈতিক নীতির ফলে বহু বিদেশি কোম্পানি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এই রাজ্যে বিনিয়োগ করছে। ফলে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছে।
  5. সরকারের নীতি: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার 2000 সালের 1 জানুয়ারী তথ্যপ্রযুক্তি নীতি প্রস্তুত করে। পরে আর তার কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন নীতি (New IT Policy) চালু হয় 2003 সালে। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সহায়ক পরিষেবা (IT enabled services বা ITES) নীতিও প্রণয়ন করা হয় 2003 সালে। এই নীতির মাধ্যমে যেকোনো তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সংস্থাকে রাজ্য সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ফলে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ভারতের প্রথম তিনটি রাজ্যের মধ্যে স্থান করে নিতে সমর্থ লাভ করে 2010 সালে।
  6. প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রয়োজনীয় শ্রমিক জোগানের জন্য সরকারি ও বেসকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
  7. পরিকাঠামোর উন্নতি: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য গঠিত হয়েছে দুটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (STPI & II)। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির জন্য যে সব পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল :
    • STP -1 (সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-1): STP – 1, 1992 সালে এপ্রিল মাসে স্থাপিত হয়। এগুলি হল বেশ বড়ো বড়ো বাড়ি যেখানে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সংস্থা তাদের অফিস খুলে বসতে পারে। STP + সম্পূর্ণ রপ্তানির জন্য স্থাপিত হয়েছে।
    • STP-II স্থাপন: STP-I -এর বাড়ির মোট ছাদের পরিমাণ ছিল 2,50,000 বর্গ ফুট। কিন্তু সবরকম পরিকাঠামোযুক্ত কাজের জায়গা রয়েছে 60,000 বর্গ ফুট। এই 100% রপ্তানিভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তির বাড়ি তৈরি হয়েছে 2003-04 মাত্র 11 মাসের রেকর্ড সময়ের মধ্যে।
    • ইনফিনিটি স্থাপন: এটি তথ্য প্রযুক্তি ভবন, 2004 সালের 22 নভেম্বর এটির শিলান্যাস ঘটে এবং 2006 সালে কাজ শুরু হয়।
    • শিল্পাঞ্চল স্থাপন: পশ্চিমবঙ্গ তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান কেন্দ্র সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স গঠন করা হয়। প্রায় 150 একরের এই হাইটেক শিল্পাঞ্চল দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য অনেক সুবিধা। এই সব সুযোগের মধ্যে রয়েছে ভি.এস.এন.এল. (V.S.N.L.) এবং সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কস অফ ইন্ডিয়ার (STP-1), আন্তর্জাতিক গেটওয়ে স্টেশন, উন্নত টেলিকম (Integrated Services Digital Network ISDN) যোগাযোগ ব্যবস্থা-সহ নিজস্ব (Dedicated) এক্সচেঞ্জ, বিমানবন্দর থেকে আসার জন্য আন্তর্জাতিক মানের রাস্তা, কাছাকাছি দুটি পাঁচ তারা হোটেল প্রভৃতি।
  8. আউটসোর্সিং: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কাজ ইন্টারনেট মারফত বাইরে থেকে আসে সে কারণে যেকোনো দেশেরকাজ অন্য দেশে বসে করা যায়। বিদেশি কোম্পানিগুলি যেখানে অল্প বেতনে বাইরে থেকে অর্থাৎ যেখানে দক্ষ শ্রমিক প্রাপ্তি সুযোগ বেশি সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি স্থাপন করে নিজেদের দেশের তথ্য সংক্রান্ত অনেক কাজ করে নিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে সে কারণে অনেক বিদেশি কোম্পানির গন্তব্যস্থল হিসাবে চিহ্নিত।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য বা পরে অধ্যায়ন করার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।