পৃথিবীর গোলত্বের আকারের অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ ?

পৃথিবীর গোলত্বের বা গোলীয় আকারের অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ গুলি উল্লেখ করো ?

0
পৃথিবীর গোলত্বের বা গোলীয় আকারের অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ গুলি উল্লেখ করো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী। তাই এই প্রশ্নটি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। “পৃথিবীর গোলত্বের বা গোলীয় আকারের অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ” এই প্রশ্নটি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির অপ্রত্যক্ষ প্রমাণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো

অপ্রত্যক্ষ প্রমাণসমূহ :

অন্যান্য গ্রহ পর্যবেক্ষণ:

সৌরজগতে যেসব গ্রহ দেখা যায় শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে তাদের সবার আকৃতি গোলাকার দেখায়। স্বাভাবিকভাবেই সৌরজগতের অন্যতম বিশেষ গ্রহ হিসেবে পৃথিবীর আকৃতিও যে গোলাকার এটাই স্বাভাবিক।

চন্দ্রগ্রহণের দৃশ্য:

আংশিক হোক বা পূর্ণ, বিভিন্ন চন্দ্রগ্রহণের সময় চন্দ্রপৃষ্ঠে পতিত পৃথিবীর ছায়ার প্রান্ত ভাগ দেখে গ্রিক পন্ডিত অ্যারিস্টটল এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পৃথিবীর আকৃতি প্রকৃতই গোলাকারের মতো। প্রতিটি চন্দ্রগ্রহণের সময়েই চাঁদের উপর পৃথিবীর ছায়াকে গোলাকার দেখা গেছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে অনুমান করা যায় পৃথিবীর গোলাকার আকারের জন্যই ছাদের উপর পৃথিবীর ছায়াকেও গোলাকার দেখায়।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পার্থক্য:

পৃথিবীপৃষ্ঠের যে – কোনো স্থানের পূর্ব দিকের দেশসমূহে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত আগে হয়ে থাকে এবং সেই স্থানের পশ্চিম দিকের দেশসমূহে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত পরে হয়। পৃথিবী গোলাকার বলেই এমন হয়। পৃথিবীর সমতল হলে সর্বোচ্চ একই সঙ্গে একই সময়ে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত প্রভৃতি হতো।

জাহাজ পর্যবেক্ষণ:

দূর থেকে আগত কোন জাহাজ তীরের দিকে আসার সময় প্রথমে মাস্তুল, পরে চোঙ, ডেক, ছাদ শেষে নিম্নভাগসহ সম্পূর্ণ জাহাজটি দৃষ্টিগোচর হয়। অনুরূপভাবে তীর থেকে দূরগামী কোনো জাহাজকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে লক্ষ্য করলে মনে হয় জাহাজটি সমুদ্রের তলায় যেন ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। দূরে যাওয়ার সময় প্রথমে জাহাজের নিম্নভাগ, ক্রমে ছাদ, মাস্তুল প্রভৃতি এবং সবশেষে সমস্ত জাহাজটি দিগন্তের নিচে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং দিগন্তের উপরে কেবল জাহাজের ধুম্ররাশি দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবী গোলীয় বলেই এর বক্র অংশ আমাদের দৃষ্টিকে আড়াল করে রাখে। এ কারণে আমরা বহুদূর থেকে জাহাজের সব অংশ একই সময়ে দেখতে পাই। পৃথিবীর সমতল হলে যদিও দূরত্ব অনুসারে জাহাজটিকে, ছোটো – বড়ো দেখাতো, তবুও তীরে আসার সময় জাহাজের সব অংশই একসঙ্গে দেখা যেত এবং দূরে যাওয়ার সময় জাহাজের সব অংশই একসঙ্গে অদৃশ্য হয়ে যেত।

দিগন্তরেখা পর্যবেক্ষণ:

কোনো উন্মুক্ত অঞ্চলের মাঝের কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালে মনে হয় আকাশ ক্রমশা নিচু হয়ে বৃত্তাকারে ভূপৃষ্ঠ বা সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে মিশে গেছে। এই অপাত মিলিত বৃত্তাকার রেখাকে দিগন্ত রেখা বলে। কোনো স্থানে নিচে দাঁড়িয়ে চারিদিকের অঞ্চল যতটা দেখা যায়, অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোনো ব্যক্তির দ্বারা দৃষ্ট দিগন্ত রেখার পরিধিও ততই বাড়তে থাকে। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণরত উপগ্রহের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটে। এই উপগ্রহটি যত উপর দিয়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, সেই উপগ্রহের দ্বারা পৃথিবী পৃষ্ঠের তত বেশি অংশ দৃশ্য হয়। কিন্তু অর্ধেকের বেশি কখনোই নয়। মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতেও আমরা পৃথিবী, চাঁদ পৃথিবীর অর্ধেক অংশই দেখতে পাই।

বেডফোর্ড লেভেল পরীক্ষা:

১৮৭০ সালে আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস নামে এক বিজ্ঞানী ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড খালে পৃথিবীর গোলাকৃতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি পরীক্ষা করেন। তিনি ওই খালের স্থির জলে ১ কিলোমিটার দূরে দূরে সমান দৈর্ঘ্যের ৩টি খুঁটি ভেলার সাহায্যে একটি সরলরেখায় এমনভাবে ভাসিয়ে রাখলেন যাতে খুঁটি তিনটির জলের উপরের অংশের দৈর্ঘ্য সমান থাকে। এবার তিনি দুরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলেন যে, মাঝের খুঁটিটির মাথা প্রথম ও তৃতীয় খুঁটিটির তুলনায় সামান্য উঁচু হয়ে রয়েছে। পৃথিবী গোল বলেই মাছের খুঁটিটির উচ্চতা বেশি বলে মনে হয়েছিল। পৃথিবী সমতল হলে খুঁটি গুলিকে সর্বদা একই সরলরেখায় দেখা যেত।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কোনো সাহায্যে লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করে তাদের সাহায্য করুন। প্রশ্নের বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।