পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ?

0
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল (Western Plateau Region):

  • অবস্থান: পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে সমগ্র পুরুলিয়া জেলা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার পশ্চিমাংশ নিয়ে এই মালভূমি অঞ্চলটি গঠিত।
  • গঠন: ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুসারে এই মালভূমি অঞ্চলটি গ্রানাইট ও নিস জাতীয় শিলার দ্বারা গঠিত। পশ্চিমের এই মালভূমিটি প্রকৃতপক্ষে ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমিরই সম্প্রসারিত অংশ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে বর্তমানে ঢেউ খেলানো উঁচু-নিচু তরঙ্গায়িত মালভূমি বা সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
  • ক্ষেত্রফল: পশ্চিমের এই মালভূমি অঞ্চলের ক্ষেত্রফল পশ্চিমবঙ্গের মোট ক্ষেত্রফলের প্রায় 6% অধিকার করে রয়েছে।
  • ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ: ভূত্বত্ত্ব, ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা ও অন্যান্য ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পশ্চিমের এই মালভূমি অঞ্চলকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – অযোধ্যা মালভূমি অঞ্চল এবং পুরুলিয়া উচ্চভূমি অঞ্চল।

অযোধ্যা মালভূমি অঞ্চল:

পুরুলিয়া জেলার সুবর্ণরেখা ও কংসাবতী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অযোধ্যা মালভূমি অবস্থিত। অঞ্চলটি পুরুলিয়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি দক্ষিণ ঝাড়খণ্ডের রাঁচি মালভূমির অংশবিশেষ বা বহিস্থ (Outlier)। এই মালভূমিটি গ্রানাইট, নিস ও শিস্ট শিলার দ্বারা গঠিত। পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা মালভূমি হল প্রকৃতপক্ষে একটি লম্বাটে পাহাড়ি এলাকা যার পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তার 21কিমি এবং উত্তর-দক্ষিণে বিস্তার প্রায় 10 কিমি। এই অঞ্চলে অনেকগুলি গোলাকার খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড় দেখা যায় যাকে মোনাডনক বলে। এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়গুলিকে স্থানীয় ভাষায় ‘ডংরী’বলে। এদের ভূতাত্ত্বিকভাবে ‘মোনাডনক’ও বলা যেতে পারে। এই অঞ্চলের কোনো কোনো স্থানে পাহাড়ের ঢাল খুব খাড়া এবং তা খুব খাড়াভাবে 200-300 মিটার উচ্চতায় উঠে গেছে। পশ্চিমের এই মালভূমিতে রয়েছে অযোধ্যা ও বাগমুণ্ডি পাহাড়। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গোর্গাবুরু (Gorgaburu, 677 মি) হল পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র পশ্চিমের মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। একে স্থানীয় ভাষায় ‘গর্জাবুরু’বলা হয়। ‘বুরু’ হল স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষায় দেবী। এখানেই রয়েছে মাঠাবুরু পাহাড়, ময়ূরপাহাড় প্রভৃতি। এখানকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পাহাড়গুলি হল— পাঞ্চেত, ভাণ্ডারী, জবরবন (Jabarban) ইত্যাদি। 

পুরুলিয়া উচ্চভূমি:

পুরুলিয়া উচ্চভূমির পশ্চিম প্রান্ত পশ্চিমে সুবর্নরেখা নদী পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে দামোদরের উপনদী গরি পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য অনুসারে সমগ্র উচ্চভূমিটিকে নিম্নলিখিত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়

  1. দক্ষিণে বরাভূম উচ্চভূমি: ত্রিভুজাকৃতি পুরুলিয়া জেলার একেবারে দক্ষিণাংশের এবড়ো-খেবড়ো ভূমিভাগকে স্থানীয় ভাষায় ‘বরাভূম’ বলে। এই অঞ্চলটি ঢেউখেলানো ও কাঁকরময়। এখানে কিছু বিচ্ছিন্ন পাহাড় দেখা যায়। এই উচ্চভূমিটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পশ্চিম মেদিনীপুর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। এখানে যেসব ক্ষয়জাত অবশিষ্ট পাহাড় দেখা যায় তাদের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলপাহাড়ী, ঠাকুরান উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এখানে রয়েছে লাকাইসিনি, গড়হাসিনি পাহাড় ।
  2. পুরুলিয়া উচ্চভূমি: অযোধ্যা মালভূমির পূর্বাংশ পুরুলিয়া উচ্চভূমি নামে পরিচিত। এখানকার গড় উচ্চতা 300 মিটারের কাছাকাছি। পুরুলিয়া মালভূমির উত্তর-পূর্বাংশে বেশ কয়েকটি টিলার মতো পাহাড় দেখা যায়— এদের মধ্যে প্রধান হল পাঞ্চেত পাহাড়, ভাণ্ডারী, বেড়ো পাহাড়, গড় পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী, খালাইচণ্ডী প্রভৃতি পাহাড়।
  3. উত্তর-পূর্বের শুশুনিয়া উচ্চভূমি: পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের উত্তর-পূর্বভাগে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে বীরভূম, বাঁকুড়া ও বর্ধমান জেলার পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়ে সমতল ভূমিতে মিশেছে। এজন্য এইসব জেলাতে কঠিন প্রস্তরময় কয়েকটি ছোটো ছোটো পাহাড় দেখা যায়। বীরভূম জেলার মামা-ভাগ্নে ও মথুরখালি; বাঁকুড়া জেলার বিহারীনাথ (452 মি:), শুশুনিয়া পাহাড় (440 মি:) মশক, কোড়ো পাহাড় প্রভৃতি। শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে শুশুনিয়া নামক একটি শীতল প্রস্রবণ যা থেকে প্রায় সারা বছর জল নির্গত হয়। বাঁকুড়াজেলার গঙ্গাজল ঘাটির উত্তর প্রান্তে দামোদরের নিকট ক্ষয়জাত পাথুরে এবড়ো-খেবড়ো টিলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মেজিয়ার দক্ষিণে দুর্লবপুরের নিকট বড় বড় বোল্ডার ক্ষেত্র দেখা যায়। এছাড়া পূর্বদিকে সোনামুখির কাছে কিছুটা তরঙ্গায়িত ল্যাটেরাইটযুক্ত ভূভাগ দেখা যায়। এর কয়েক কিলোমিটার পরে পাথুরে টিলা (Rocky Knoll) -এর অবস্থান লক্ষ করা যায়। একে কারাসোলি (Karasoli) বলে। এর উচ্চতা মাত্র 100 মিটার।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য বা পরে অধ্যায়ন করার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।