পশ্চিমবঙ্গের বদ্বীপ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ?

0
পশ্চিমবঙ্গের বদ্বীপ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গের বদ্বীপ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের বদ্বীপ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?

গঙ্গা বদ্বীপ সমভূমি:

অবস্থান: প্রকৃতপক্ষে যে অঞ্চলে গঙ্গা নদী পদ্মা ও ভাগীরথী নামক দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে, সেই অঞ্চল থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অংশ গঙ্গা বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত। (তবে গঙ্গা বদ্বীপের দক্ষিণ অংশের ভূগঠনের কার্য এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে এই অংশটিকে ‘সুন্দরবন’ নামে আলাদা অঞ্চলে ভাগ করা হয়ে থাকে।) গঙ্গা দ্বীপের পশ্চিম সীমা ভাগিরথী-হুগলি নদী অববাহিকা পর্যন্ত প্রসারিত। এর পূর্ব সীমা বাংলাদেশের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও, আসলে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নদীর বদ্বীপের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সুতরাং ‘গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল বলতে হুগলি, নদীয়া, কলকাতা ও হাওড়া জেলাগুলির সমগ্র অংশ, উত্তর 24 পরগণা ও দক্ষিণ 24 পরগণার উত্তরাংশ এবং বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশকে বোঝায়।

উৎপত্তি: সমগ্র গঙ্গা নদীর বদ্বীপ অঞ্চল পলিমাটি দ্বারা গঠিত সমতলভূমি। গঙ্গা ও তার শাখানদীগুলির বয়ে আনা পলি জমে জমে এই বদ্বীপ অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।

ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:

  1. এই অঞ্চলের উচতা গড়ে 15 মিটার।
  2. সমগ্র অঞ্চলই উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু।
  3. পলিমাটি গঠিত সমতলভূমি বলে এখানে ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বিশেষ লক্ষ করা যায় না।
  4. গঙ্গা, পদ্মা ও ভাগীরথী এবং তাদের অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী দ্বারা বহুকাল ধরে পলি সঞ্চয়ের ফলে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
  5. সমতল প্রকৃতির বলে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলিতে অসংখ্য বাঁক দেখা যায়। ফলে সমভূমি অসংখ্য খাল-বিল, জলাভূমি, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদে পূর্ণ ।

ভূপ্রাকৃতিক উপবিভাগ:

গঠন ও উৎপত্তি অনুসারে এই সমভূমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়— মুমুর্ষু বা মৃতপ্রায় বদ্বীপ, পরিণত বদ্বীপ ও সক্রিয় বদ্বীপ।

  1. মুমুর্ষু বা মৃতপ্রায় বদ্বীপ: বদ্বীপের উত্তরাংশ (উঃ 24 পরগণা জেলার উত্তরাংশ, সমগ্র নদিয়া জেলা এবং মুর্শিদাবাদ জেলার পূর্বাংশ) মৃতপ্রায় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অংশের ওপর দিয়ে পদ্মা বা ভাগীরথীর যেসব শাখানদী (জলঙ্গি, চূর্ণি, মাথাভাঙা প্রভৃতি) প্রবাহিত হয়েছে। সেগুলি মৃতপ্রায়। অর্থাৎ সেগুলি আর নদুন করে পলি ফেলে এখানে ভূমি গঠন করে না। ফলে এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ বহুকাল পূর্বেই বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য এই অঞ্চলে বহু পরিত্যক্ত বা আবদ্ধ নদী এবং খাল, বিল প্রভৃতি দেখা যায়। এই অঞ্চলটি বাগড়ি নামেও পরিচিত।
  2. পরিণত বদ্বীপ: বদ্বীপ অঞ্চলের মধ্যভাগকে পরিণত বদ্বীপ বলা হয়। দক্ষিণ 24 পরগণা জেলার উত্তর ও মধ্যাংশ, উত্তর 24 পরগণা জেলার মধ্যাংশ, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমভূমি নিয়ে এটি গঠিত। এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। এখানকার নদীগুলি প্রাণবন্ত। তাই কোনো কোনো নদী (যেমন ইছামতী) এখনো পলি ফেলে ভূমিরূপে অল্পস্বল্প পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে। এই অঞ্চলেও বহু জলভূমি বা বিল দেখা যায়। যেমন- কলকাতার পূর্বপ্রান্তে সল্টলেক বা লবণ হ্রদ এলাকা। এখানকার নদীগুলির বদ্বীপ গঠনের কাজ সম্প্রতি শেষ হলেও এরা এখনো মাঝে মাঝে পলি সঞ্চয়ের মাধ্যমে কোনো কোনো স্থানে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়।
  3. সক্রিয় বদ্বীপ বা নতুন বদ্বীপ: দক্ষিণ 24 পরগণা জেলার অধিকাংশ বিশেষত দক্ষিণ ও পূর্বাংশ এবং উত্তর 24 পরগণা জেলার দক্ষিণ পূর্বাংশের নদীগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে পলি সঞ্চয় করে বদ্বীপ গঠনের কাজ এখনো করে চলেছে বলে এই অঞ্চল সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চল নামে পরিচিত। পরিণত বদ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে সক্রিয় বা নতুন বদ্বীপ অঞ্চল অবস্থিত। এই অঞ্চলের নদীগুলি খুবই সক্রিয় বলে ব-দ্বীপ গঠনের কাজ এখনো পুরোদমে বা সক্রিয়ভাবে চলছে এবং এর ফলে নতুন নতুন বদ্বীপও সৃষ্টি হচ্ছে। এইসব কারণে এই এলাকাকে সক্রিয় বা নতুন বদ্বীপ অঞ্চল বলা হয়। যেমন— সমগ্র সুন্দরবনে জেগে ওঠা বদ্বীপ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য বা পরে অধ্যায়ন করার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।