পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ?

0
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো ?

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য:

পশ্চিমবাংলার দক্ষিণবঙ্গের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে কর্কটক্রান্তিরেখা বিস্তৃত সেজন্য পশ্চিমবঙ্গে ক্রান্তীয় জলবায়ুর প্রায় সর্বপ্রকার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এছাড়া উত্তরে হিমালয় পর্বত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পার্শ্ববর্তী ছোটোনাগপুর ও পুরুলিয়ায় মালভূমি, অন্যান্য ভূপ্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান প্রভৃতি, পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। এইসব নিয়ন্ত্রকগুলির কারণে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর নিম্নলিখিত প্রকারের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়-

  1. জলবায়ুর প্রকৃতি: পশ্চিমবঙ্গের মধ্যভাগের সামান্য দক্ষিণাংশ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে কর্কটক্রান্তিরেখা বিস্তৃত থাকায় পশ্চিমবঙ্গ উয় ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত।
  2. মৌসুমি জলবায়ু: পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু সর্বাধিক নিয়ন্ত্রিত হয় মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের দ্বারা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানকার জলবায়ুর ওপর মৌসুমি বায়ুর অত্যধিক প্রভাব। পশ্চিমবঙ্গের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় 90 ভাগ ঘটে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে। মৌসুমি বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমনের কারণে পশ্চিমবঙ্গে আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল বিরাজ করে। মৌসুমি বায়ুর আগমনজনিত কারণে পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা 5°-10° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হ্রাস পায়।
  3. বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ: গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের স্থলভাগে নিম্নচাপ ও জলভাগে উচ্চচাপ থাকে বলে সমুদ্রের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম আর্দ্র মৌসুমি বায়ু স্থলভাগের দিকে আসে। শীতকালে জলভাগে নিম্নচাপ ও স্থলভাগে উচ্চ চাপ সৃষ্টি হয় বলে শুষ্ক স্থলবায়ু জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল গ্রীষ্মকালে যে দিকে বায়ু প্রবাহিত হয় শীতকালে তার বিপরীত দিকে ও বিপরীত ধর্মী [আর্দ্র ও শুষ্ক] বায়ু প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দঃ পঃ মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উঃ পূঃ মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।
  4. উন্নতার তারতম্য: কর্কটক্রান্ত রেখার (23 উঃ অঃ) বিস্তার, ভৌগোলিক অবস্থান, অক্ষাংশগত বিস্তার এবং ভূপ্রাকৃতিক গঠন ও তারতম্য জনিত কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে উয়তার তারতম্য দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে যখন গড় উন্নতা প্রায় 35°-40° সেন্টিগ্রেড হয়, তখন দক্ষিণে উপকূলবর্তী দীঘা ও দক্ষিণ 24 পরগণার দক্ষিণাংশে গড় উন্নতা 30°-32° সেন্টিগ্রেড এবং উত্তরের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের উন্নতা থাকে 10°-18° সেন্টিগ্রেড বা তার নিচে। আবার শীতকালে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে যখন উন্নতা 0°-5° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে তখন দক্ষিণবঙ্গে উয়তা গড়ে 15°-20° সেন্টিগ্রেড হয়।
  5. জলবায়ুর তারতম্য: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন, পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে চরম ভাবাপন্ন প্রকৃতির উপশুষ্ক এবং উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে নাতিশীতোয় জলবায়ু বিরাজ করতে দেখা যায়।
  6. ঋতুবৈচিত্র্য: সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ এবং মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে চারটি ঋতুবৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। যথা
    • গ্রীষ্মকাল: মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত।
    • বর্ষাকাল: জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত।
    • শরৎকাল: সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।
    • শীতকাল: ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।
  7. আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল: গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর আগমনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা অনেক বেড়ে যায় বলে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র থাকে এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বাতাস প্রবাহিত হয় বলে শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে অর্থাৎ বৃষ্টি হয় না।
  8. বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন: পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত যেখানে 300-500 সেমি. সেখানে দক্ষিণবঙ্গে 150-200 সেমি এবং পুরুলিয়া জেলায় চরম প্রকৃতির জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
  9. গ্রীষ্মকালের প্রাধান্য: কর্কটক্রান্তি অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে উয়ক্রান্তীয় জলবায়ুর প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। পশ্চিমবঙ্গে বছরে তিনমাস [ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি] শীতকাল এবং বাকি সময় উষ্ণতা বেশি থাকে বলে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে গ্রীষ্মকালের প্রাধান্য বেশি থাকে।
  10. স্থানীয় বায়ু প্রবাহ: গ্রীষ্মকালে [মার্চ-মে মাস] সূর্যের উত্তরায়ণের কারণে পশ্চিমবঙ্গে বাতাসের উষ্ণতা খুব বেড়ে গেলে মাঝে মাঝেই গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় বলে গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝেই অপরাহ্নে কালবৈশাখী ঝড়ের আবির্ভাব ঘটে। গ্রীষ্মকালে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুর-বর্ধমান-বীরভূম অঞ্চলে কখনো কখনো ‘লু’ ধরনের স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হয়। এছাড়া গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রায়শই ঘূর্ণিঝড়ের (যেমন—দক্ষিণ 24 পরগণার আয়লা ঝড়) সৃষ্টি হয়। আবার শীতকালে কখনো কখনো পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে অল্প বৃষ্টিপাত ঘটে।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য বা পরে অধ্যায়ন করার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।