বায়ুমণ্ডলের তাপের তারতম্য ?

0
বায়ুমণ্ডলের তাপের তারতম্যের কারণ সমূহ লেখো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই উপযোগী এবং এই প্রশ্নটি তারা গুরত্ব সহকারে অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। বায়ুমণ্ডলের তাপের তারতম্যের কারণ এই প্রশ্নটি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

বায়ুমণ্ডলের তাপের তারতম্যের কারণ সমূহ লেখো ?

অক্ষাংশ: অক্ষাংশভেদে সূর্যরশ্মির পতন কোণের পার্থক্য হয়। নিম্ন অক্ষাংশ বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে। ফলে সূর্যরশ্মি কম স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ও কম বায়ুস্তর ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পড়ে। তাপ উৎপাদন ক্ষমতা তাই বেশি। নিরক্ষীয় অঞ্চল তাই উয় প্রকৃতির হয়। যতই অক্ষাংশ বাড়তে থাকে ততই সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। তির্যক রশ্মির তাপ উৎপাদন ক্ষমতা কম। কেন-না, তির্যক রশ্মি অধিক স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ও অধিক বায়ুস্তর ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পড়ে। এই কারণে মেরুর দিকে উত্তাপ ক্রমশ কমতে থাকে। নিরক্ষরেখা বা 0° অক্ষাংশ থেকে যতই মেরুর দিকে যাওয়া যায় তত 1° অক্ষাংশ বাড়লে উষ্ণতা 0.28° সেন্টিগ্রেড হারে কমতে থাকে। তাইতো নিরক্ষীয় অঞ্চলে উত্তাপ বেশি (যেমন- আফ্রিকার দেশসমূহ), মেরু অঞ্চলে সারাবছর তীব্র শীত (যেমন- অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ)।

উচ্চতা: ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা উষ্ণতার পার্থক্যের কারণ হয়। সাধারণত প্রতি 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে 6-4° সে. বা 100 মিটারে 0.6° সে. বা 155 মিটার উচ্চতায় 1° সে. হারে উষ্ণতা কমতে থাকে। এইভাবে উষ্ণতা হ্রাস পাওয়ার হারকে পরিবেশীয় উষ্ণতা হ্রাস হার বা ELR [Environmental Temperature Lapse Rate] বা উষ্ণতার স্বাভাবিক হ্রাস হার বলে। এই কারণে জুন মাসে 240 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত দিল্লির গড় উষ্ণতা থাকে 33.3° সে., আর কাছেই 2412 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সিমলার উদ্ভূতা থাকে 19.4° সে.।

সমুদ্র থেকে দূরত্ব বা স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন:

জলভাগ ও স্থলভাগের বণ্টনের কয়েকটি তাপীয় বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন- 

  1. স্থলভাগ দ্রুত উষু ও দ্রুত শীতল হয়। 
  2. জলভাগ তুলনায় ধীরে উত্তপ্ত হয় ও ধীরে শীতল হয়। 
  3. একই পরিমাণ সূর্যরশ্মি দ্বারা জলভাগ যতটা উষ্ণ হয় সমপরিমাণ স্থলভাগ তার তিনগুণ বেশি উষ্ণ হয়। 
  4. একই অক্ষাংশে গ্রীষ্মকালে মহাদেশগুলি মহাসাগর থেকে বেশি উত্তপ্ত হয়। শীতকালে মহাদেশগুলি মহাসাগর অপেক্ষা বেশি শীতল হয়। এই বৈশিষ্ট্য থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গ্রীষ্মকালে দিনে স্থলভাগ জলভাগ অপেক্ষা বেশি উষ্ণ হয়। তেমনি শীতকালে বেশি শীতল হয়। যে স্থান সমুদ্র, হ্রদ প্রভৃতি বৃহৎ জলভাগের যত নিকটে অবস্থিত তার জলবায়ু তত সমভাবাপন্ন। অর্থাৎ শীতে সহনীয় শীত, গ্রীষ্মে সহনীয় উয়তা। যেমন- মুম্বই, চেন্নাই, গোয়া, পুরী, দিঘা প্রভৃতি অঞ্চল। আবার যে স্থান সমুদ্র, হ্রদ প্রভৃতি বৃহৎ জলভাগ থেকে যত দূরে অবস্থিত, সেখানকার জলবায়ুর চরমতা তত বেশি। অর্থাৎ শীতে তীব্র শীত, আবার গ্রীষ্মে অসহনীয় উষ্ণতা। যেমন- দিল্লি, কানপুর প্রভৃতি অঞ্চল। এই কারণে উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন। উপকূল থেকে দূরে (মঙ্গোলিয়া, মধ্য এশিয়া) জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।

বায়ুপ্রবাহ:

বায়ুপ্রবাহ কোনো স্থানের বায়ুর উতাকে প্রভাবিত করে- 

  1. কোনো শীতল অঞ্চলের ওপর দিয়ে উয় বায়ু প্রবাহিত হলে সেখানে বায়ুর উদ্ভূতা বেড়ে যায়। যেমন- বসন্তকালে প্রেইরি অঞ্চলের উষ্ণতা থাকে 2-5°সে. ; সেখানে রকি পর্বতমালা থেকে উ চিনুক (20° সে.) বায়ু প্রবেশ করা মাত্রই উয়তা বেড়ে 15° সে. হয়ে যায়। 
  2. কোনো উষ্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হলে উয়তা কমে যায়। যেমন- শীতল পম্পেরো বায়ু আর্জেন্টিনার পম্পাস তৃণভূমির উন্নতার হ্রাস ঘটায়। 
  3. শীত ও বসন্তের শুরুতে উষ্ণ খামসিন বায়ুপ্রবাহ উত্তর আফ্রিকার উয়তা বাড়ায়।
  4. শীতল মিস্টাল বায়ুপ্রবাহ ফ্রান্সের রোন উপত্যকার উতার হ্রাস ঘটায়। 
  5. উষ্ণ লু বায়ু উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে যা উদ্ধৃতার বৃদ্ধি ঘটায়। 
  6. কালবৈশাখী নামক ঝড়-বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু পূর্ব ভারতে সাময়িক গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে স্বস্তি দেয়। 

 সমুদ্রস্রোত:

বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ হয়- 

  1. কোনো অঞ্চলের ওপর শীতল সমুদ্রস্রোত বয়ে গেলে ওই সংলগ্ন স্থলভাগে স্রোতবাহিত বায়ুপ্রবাহ ঢুকে পড়ে। ফলে সেখানে বায়ুর উয়তা হ্রাস পায়। যেমন- শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে কানাডার ল্যাব্রাডর উপকূলের বায়ু শীতল প্রকৃতির হয়। 
  2. কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে উয় সমুদ্রস্রোত বয়ে গেলে ওই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্থলভাগের উষ্ণতার বৃদ্ধি ঘটায়। যেমন- উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলের উয়তা কিছুটা বৃদ্ধি পায়।

ভূমির ঢাল:

ভূমির ঢাল বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ হয়। যেমন- 

  1. উত্তর গোলার্ধে পাহাড়-পর্বত ও যে-কোনো ভূমির ঢাল দক্ষিণদিকে হলে উষ্ণতা বেশি হয়। কারণ নিরক্ষরেখার দিকে ভূমির ঢাল বেশি বলে সূর্যকিরণ কিছুটা লম্বভাবে পড়ে। ফলে উদ্ভূতা বেশি। 
  2. দক্ষিণ গোলার্ধে পাহাড়-পর্বত বা ভূমিঢাল উত্তরদিকে হলে উষ্ণতা বেশি হয়। সূর্যকিরণ কিছুটা লম্বভাবে পড়ে বলে এরূপ হয়
  3. পার্বত্য অঞ্চলে উষ্ণতাযুক্ত স্থানেই বসতি গড়ে ওঠে। তাই উত্তর গোলার্ধে পর্বতের দক্ষিণ ঢালে ও দক্ষিণ গোলার্ধে পর্বতের উত্তর ঢালে লোকবসতি গড়ে ওঠে। এই অঞ্চলগুলিতে কৃষির বিকাশ ঘটে।

উপরের প্রস্নোধৃত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। এই প্রশ্নের বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।