মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায় ?

0
মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা অধ্যায়ন করবো ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে যে প্রশ্নটি পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী। এই প্রশ্নটি অধ্যায়ন করলে ছাত্রছাত্রীরা খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায় এই প্রশ্নটি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো ?

মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়: ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ বা মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়গুলি নীচে আলোচনা করা হল

ক্ষয়প্রাপ্ত অঞ্চলের সুনির্দিষ্ট মানচিত্রায়ন: ভূমিক্ষয় প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ধাপই হল ভূপৃষ্ঠে ক্ষয়প্রাপ্ত অঞ্চলসমূহের সঠিক চিহ্নিত বা শনাক্তকরণ। উপযুক্ত ও নিখুঁত মানচিত্র নির্মাণের দ্বারা এই অঞ্চলসমূহকে চিহ্নিত করতে পারলে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ প্রকল্প সহজেই রূপায়ণ করা সম্ভব হয়।

বনভূমি সৃষ্টি (Afforestation): উদ্ভিদ শিকড় একদিকে যেমন মৃত্তিকাকে ধরে রাখতে পারে অপরদিকে তেমনি উদ্ভিদ মৃত্তিকার ওপর আচ্ছাদনের কাজ করে বলে বৃষ্টিবিন্দুর আঘাতজনিত গতিশক্তির আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করে। এজন্য বনভূমি নষ্ট না করে প্রয়োজন মতো নতুন চারাগাছ লাগিয়ে বনভূমির সৃষ্টি, মৃত্তিকা ক্ষয়কে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

ধাপ চাষ(Terrace Cultivatroy): পার্বত্য অঞ্চলে ধাপ কেটে চাষ আবাদ করা একটি পুরোনো রীতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমির চালের আড়াআড়িভাবে ধাপগুলি তৈরি করা হয় এবং ফসলের সারিও আড়াআড়িভাবে লাগানো হয়। ধাপগুলি দেখতে অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকার হয়। এক্ষেত্রে জল সরাসরি গড়িয়ে পড়তে পারে না বলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণও কম হয় ।

ফালি চাষ (Strip Cropping): পাহাড়ি অঞ্চলে ছোটো ছোটো পাহাড়ি মাটিতে পাহাড়ের ঢাল অনুসারে কয়েক সারি শস্যের অন্তর অন্তর ঢাল বরাবর আড়াআড়িভাবে একখণ্ড জমিতে শস্য চাষ করার নামই ফালি চাষ। যেসব পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমির ঢাল অত্যন্ত বেশি এবং ঢাল সমভাবে একই দিকে বিস্তৃত সেইসব অঞ্চলে এভাবে ফালি চাষ করলে জলের প্রবাহের গতি প্রতিহত হয় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ হয়।

উচ্চতা অনুসারে চাষ (Contour Farming): কোনো বিস্তৃত পার্বত্য অঞ্চলে উঁচুনিচু এলাকার সমান উচ্চতাযুক্ত বিন্দুগুলিকে যোগ করে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে সমঢাল রেখা বলে। ওই রেখা বরাবর 8-9 ফুট উঁচুতে এমনভাবে বাঁধ দেওয়া হয় যাতে দুটি বাঁধের মধ্যবর্তী ভূমি থেকে জল বের হতে না পারে। এভাবে বাঁধ দেওয়ার ফলে মৃত্তিকার ক্ষয়কে ব্যাপক আকারে রোধ করা সম্ভব এবং এই পদ্ধতিতে চাষ আবাদ করাকে উচ্চতা অনুসারে চাষ বলে।

গালি ক্ষয় নিবারণ (Gally Reclamation): যেসব এলাকার মৃত্তিকা নরম ও আলগা সেইসব এলাকায় মাঝে মাঝে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ঘটলে সেখানে নালি ক্ষয় সর্বাধিক হয়। এই নালি ক্ষয় রোধের জন্য যে যে কৌশল গ্রহণ করা হয় তা হল

  • খাত বরাবর জলপ্রবাহ রোধে বাঁধ নির্মাণ,
  • খাতের সর্বোচ্চ অঞ্চলে ক্ষয়রোধ করার জন্য মৃত্তিকা প্রাচীর নির্মাণ,
  • মৃত্তিকা খাতে বিভিন্ন ঝোপঝাড় সৃষ্টি করলে বা নালিক্ষয় অঞ্চলে বাঁধের পাশে চারাগাছ লাগালে ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।

নদী তীরের ক্ষয় রোধ (Conservation Of River Bank): নদীর স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে নদী তীরবর্তী মৃত্তিকা সর্বদা নরম হয়ে ক্ষয় হয়। তাই মৃত্তিকার গ্রথনকে দৃঢ় করতে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে মাটির বাঁধ বা কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করলে মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ করা সম্ভব ।

শেল্টার বেল্ট (Shelter Belt): বায়ুপ্রবাহের গতিপথের আড়াআড়ি বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ভূমিক্ষয় অনেকটাই কমানো যায় ।

অগভীর নালা কাটা (Furrow): বাতাসের কার্যকরী শক্তি যেখানে বেশি সেই অঞ্চলে বায়ুর গতিপথের আড়াআড়িভাবে জমিতে নালা কেটে রাখলে ভূমিক্ষয় অনেকটা রক্ষা পায় ও ভূমিক্ষয় কম হয়। 10 বন্যা নিয়ন্ত্রণ [Flood Control] : বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও ভূমিক্ষয় কমানো যায়।

শস্যবর্তন (Crop Rotation): শস্যবর্তন ও সারিবদ্ধ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন [crop rotation & interculture] মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি বজায় রাখতে এবং মৃত্তিকার দৃঢ় গঠনে সাহায্য করে। ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাস পায় । 

পাটজাত পদার্থের ব্যবহার (Use Of Jute Product ): ভূমিভাগে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ ও মৃত্তিকার গুণাগুণ বৃদ্ধি এবং উদ্ভিদের আচ্ছাদন সৃষ্টি ও পাটজাত ভূমিবস্ত্রের ব্যবহার মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের সবচেয়ে সম্ভাবনাপূর্ণ উদ্যোগ। 

কারণ:

  • পার্ট পচনশীল হলেও পাটজাত ভূমিবস্ত্র ভূমিভাগের ওপর জৈবপদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • ভূমিভাগের ওপর পাটের চাদর প্রয়োগ দ্বারা বৃষ্টিবিন্দুর পতনজনিত আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করা সম্ভব। 
  • পাটজাত ভূমিবস্ত্র বর্ষার সময় জলের গতিকে কিছু সময়ের জন্য প্রতিরোধ করে মৃত্তিকা ক্ষয়কে কমাতে সাহায্য করে।

পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ: ব্যাপক হারে পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তৃণভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা মৃত্তিকাকে আটকে রাখে। ফলে যথেচ্ছ পশুচারণ করতে পারলে মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাস করা সম্ভব।

ঝুমচাষ নিষিদ্ধকরণ: বনভূমি নষ্ট করে চাষ করলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেড়ে যায়। এজন্য ঝুমচাষ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।

 উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো আক্ষেপ থাকলে অবশ্যই মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করতে ভুলবেন না। প্রশ্নটি পরে অধ্যায়ন করার ক্ষেত্রে বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।