বায়ুপ্রবাহ কি ও কয়প্রকার?

3
বায়ুপ্রবাহ কি ও কয়প্রকার?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই আজ আমরা অধ্যায়ন করবো ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই উপকারী। এই বিষয়টি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে তাই তাদের কাছে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুপ্রবাহ কি ও কয়প্রকার এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

বায়ুপ্রবাহ কি ও কয়প্রকার?

ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিকভাবে (উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে) বায়ু-চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ (Winds) বলে । বায়ুচাপ অঞ্চলদুটির বায়ুচাপের পার্থক্যের মাত্রার উপর বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নির্ভর করে । তাই দেখা যায়, বায়ু কখনও প্রবল বেগে আবার কখনও ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয় ।

বৈশিষ্ট্যঃ

বায়ুপ্রবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. চাপের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য বায়ুপ্রবাহ উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
  2. ভূ-পৃষ্ঠের সাথে সংঘর্ষে বায়ু ধীরগতিসম্পন্ন হয় । সেই কারণে উচ্চতা যত বাড়ে বাঁধা তত কমে বলে বায়ুর গতিবেগও বাড়ে ।
  3. বায়ুচাপ অঞ্চলদুটির বায়ুচাপের পার্থক্যের মাত্রার উপর বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নির্ভর করে ।
  4. উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু বাইরের দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ, বহির্গামী হয় এবং নিম্নচাপ অঞ্চলে থেকে বায়ু ভিতরের দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ, কেন্দ্রমুখী হয় ।
  5. স্থলভাগ অপেক্ষা সমুদ্রভাগে বায়ুর গতিবেগ বেশী হয় ।
  6. কোরিওলিস বল – এর প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।

সৃষ্টির কারণ বা নিয়ন্ত্রকসমূহঃ

বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টির কারণ বা নিয়ন্ত্রকগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. বায়ুচাপের তারতম্যঃ বায়ুচাপের তারতম্যই হল বায়ুপ্রবাহের মূল কারণ । বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় । বায়ুর গতিবেগ নির্ধারিত হয় বায়ুচাপের ঢালের শক্তির উপর । বায়ুচাপের ঢাল যত বাড়ে, বায়ুর গতিবেগও তত বাড়তে থাকে ।
  2. ভূকেন্দ্রাতিগ শক্তিঃ পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্টি হয় ভূকেন্দ্রাতিগ শক্তিজনিত কোরিওলিস বল । এই কোরিওলিস বলের প্রভাব নিরক্ষরেখায় শূণ্য ও মেরুতে সর্বাধিক । কোরিওলিস বলের প্রভাবেই বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।
  3. ঘর্ষণের প্রভাবঃ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যতই উপরের দিকে ওঠা যায়, বায়ুপ্রবাহের নিয়মগুলি ততই পরিবর্তিত হয় । তাই ভূ-পৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ু ভূ-পৃষ্ঠের সাথে ঘর্ষণের ফলে উপরের বায়ুর থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকে । এছাড়াও, পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহের যে দিক পরিবর্তন ঘটে তাও কিছুটা ধীরগতিতে হয় । ফলে বায়ুপ্রবাহ উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ে প্রবেশের সময় কিছুটা বক্রাকারে প্রবেশ করে থাকে ।

বায়ুপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগঃ

বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি, উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহকে মূলত চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয় । যথা –নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, সাময়িক বায়ুপ্রবাহআকস্মিক বায়ুপ্রবাহ স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ । নীচে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ (Planetary Winds or, Permanent Winds):

পৃথিবীর স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলির উপর নির্ভর করে সারাবছর নিয়মিতভাবে একটি নির্দিষ্ট দিকে নির্দিষ্ট গতিতে প্রবাহিত বায়ুপ্রবাহকে নিয়ত বায়ুপ্রবাহ (Planetary Winds or, Permanent Winds) বলে ।

শ্রেণীবিভাগঃ 

প্রবাহের দিক, গতি ও অবস্থান অনুযায়ী নিয়ত বায়ুপ্রবাহ তিন প্রকার । যথা – ১. আয়ন বায়ু (Trade Winds)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ২. পশ্চিমা বায়ু (The Westerlies)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে] ও ৩. মেরু বায়ু (Polar Winds)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে] ।

বৈশিষ্ট্যঃ

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  • এইসকল বায়ুপ্রবাহ সারা বছর একটি নির্দিষ্ট দিকে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয় ।
  • বায়ুচাপ বলয়গুলির মধ্যে সমতা বজায় রাখার জন্য নিয়ত বায়ু প্রবাহিত হয় ।

সাময়িক বায়ুপ্রবাহ (Periodical Winds):

সারা বছর ধরে প্রবাহিত না হয়ে বছরের কোনো একটি বিশেষ ঋতুতে বা দিনের বিশেষ সময়ে যে বায়ু নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে সাময়িক বায়ুপ্রবাহ (Periodical Winds) বলে ।

শ্রেণীবিভাগঃ

বায়ুপ্রবাহের দিক, সময় ও অবস্থান অনুযায়ী সাময়িক বায়ুপ্রবাহ পাঁচ প্রকার । যথা – ১. সমুদ্রবায়ু (Sea Breeze)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ২. স্থলবায়ু (Land Breeze)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৩. মৌসুমী বায়ু (Monsoon Wind)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৪. উপত্যকা বায়ু বা অ্যানাবেটিক বায়ু (Anabatic Wind)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে] ও ৫. পার্বত্য বায়ু বা ক্যাটাবেটিক বায়ুক্যাটাবেটিক বায়ু (katabatic Wind)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে] ।

বৈশিষ্ট্যঃ 

সাময়িক বায়ুপ্রবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  • দৈনিক বা ঋতুভিত্তিক চাপ ও তাপের তারতম্যের জন্য সাময়িক বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয় ।
  • এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহ একটি নির্দিষ্ট দিকে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রবাহিত হয় ।

আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ (Irregular Winds):

ভূ-পৃষ্ঠে কোনো স্থানে হঠাৎ বায়ুচাপের ব্যাপক তারতম্য ঘটলে যে বায়ুপ্রবাহ হঠাৎ আবির্ভূত হয় এবং কিছুকাল অবস্থানের পর আবার হঠাৎই অন্তর্হিত হয়, তাকে আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ (Irregular Winds) বলে ।

শ্রেণীবিভাগঃ

বৈশিষ্টাবলীর ভিত্তিতে আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ মূলত দুইপ্রকার । যথা – ১. ঘূর্ণবাত………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে] ও ২. প্রতীপ ঘূর্ণবাত………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে] ।

বৈশিষ্ট্যঃ

আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ –

  • এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহের উৎপত্তি ও গতিপথ – উভয়ই অনিয়মিত ।
  • এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহ বায়ুচাপ বলয়কে অনুসরণ করে না ।

স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ (Local Winds):

বছরের নির্দিষ্ট সময়ে স্থানীয় কারণবশত তাপ ও চাপের বৈষম্যহেতু বিশেষ বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হলে, তাকে স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ (Local Winds) বলে ।

শ্রেণীবিভাগঃ

অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বেশ কয়েক প্রকার স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের উল্লেখ পাওয়া যায় । যথা
১. চিনুক (Chinook)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ২. ফন (Fohn)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৩. বোরা………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৪. সিরোক্কো (Sirocco)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৫. মিস্ট্রাল………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৬. লু (Loo)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৭. আঁধি (Andhi)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ৮. হারমাট্টান (Hurmattan), ৯. পম্পেরো………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ১০. খামসিন (Khamsin)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ১১. লেভেস (Leves)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ১২. টাকু (Taku)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে], ১৩. কালবৈশাখী (Kalboishakhi)………[বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টগুলিতে] প্রভৃতি ।

বৈশিষ্ট্যঃ

স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  • সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুজনিত কারণে সৃষ্টি হয় এবং ঐ নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ।
  • এরা সাধারণত উঁচু পর্বতাঞ্চলে বা মরু অঞ্চলে সৃষ্টি হয় ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কোনো সাহায্যপ্রাপ্ত হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও প্রশ্নের বিষয়টি শেয়ার করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।