মহানদী পরিকল্পনা বা হীরাকুঁদ পরিকল্পনা ?

0
মহানদী পরিকল্পনা বা হীরাকুঁদ পরিকল্পনা সম্পর্কে লেখ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা শিখবো ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী। ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি অধ্যায়ন করলে তারা সহজেই পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। মহানদী পরিকল্পনা বা হীরাকুঁদ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

Advertisement

মহানদী পরিকল্পনা বা হীরাকুঁদ পরিকল্পনা সম্পর্কে লেখ?

পরিচিতিঃ মহানদী ওড়িশার বৃহত্তম নদী । মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টকের নিকট থেকে উৎপত্তি লাভ করে এই নদী তেল , ইব , মন্দ , জঙ্ক , হাঁসদেও , কাটজুড়ি প্রভৃতি বহু উপনদী ও শাখানদী বিশিষ্ট হয়েছে । দামােদরের মত এই নদীও বর্ষাকালে প্রায় প্রতি বৎসর মােহনার ব – দ্বীপ অঞ্চলকে প্রলয়ঙ্কর বন্যার দ্বারা প্লাবিত করত । এই কারণে মহানদীর ধ্বংসকারী শক্তিকে গঠনমূলক কার্যে ব্যবহার করবার জন্য মহানদী পরিকল্পনা বা হীরাকুঁদ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালেই প্রকল্পটি রূপায়িত হয় । এই পরিকল্পনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য হীরাকুঁদে মহানদীর উপর একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে । পরে টিকেরপাড়া ও নারাজে আরও দুইটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে । হীরাকুঁদ বাঁধের পশ্চাতের জলাধার থেকে বিস্তীর্ণ কৃষিক্ষেত্রে সেচকার্যে জল ব্যবহৃত হচ্ছে এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে । পরবর্তী পর্যায়ে নারাজে একটি উইয়ার বাঁধ এবং পুরী ও কটক জেলায় জলসেচের জন্য এই বাঁধ থেকে জলসেচের জন্য খাল খনন করবার পরিকল্পনা ওড়িশা সরকার দ্বারা গৃহীত হয়েছে ।

উদ্দেশ্যঃ মহানদী পরিকল্পনা বা হীরাকুঁদ পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি হল নিম্নরূপ 

  • বন্যা নিয়ন্ত্রণঃ হীরাকুঁদ বাঁধ ও সম্বলপুর থেকে ১৪ কিলােমিটার পশ্চিমে মহানদীর উচ্চ অববাহিকায় হীরাকুঁদে এই বাঁধটি নির্মাণ করা হয় । হীরাকুঁদ পৃথিবীর দীর্ঘতম বাঁধ । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪,৮০১ মিটার এবং উচ্চতা প্রায় ৬০ মিটার । ১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে হীরাকুঁদ বাঁধের নির্মাণকার্য শেষ হয় । এই বাঁধের পশ্চাতে যে জলাধার অবস্থিত তার জলধারণের ক্ষমতা প্রায় ৮১০ কোটি ঘন মিটার , যা দামােদরের চারটি বাঁধের সম্মিলিত ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ । এই বাঁধ নির্মাণের ফলে মহানদীর ব – দ্বীপ অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ বহুলাংশে কমে গেছে ।
  • জলবিদ্যুৎ উৎপাদনঃ এই বহুমুখী প্রকল্পে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র মুলত দুটি । যথা – 
  • হীরাকুঁদ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪ টি ইউনিটে প্রথমে ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হত । পরে একে বর্ধিত করে প্রায় ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন করা হয় । এই জলবিদ্যুৎ রাউরকেল্লা লৌহ ও ইস্পাত কারখানায় , হীরাকুঁদের অ্যালুমিনিয়ম কারখানায় , রাজগাংপুরের সিমেন্ট কারখানায় , ব্ৰজরাজনগরের কাগজকলে , কলিঙ্গ টিউব কারখানায় , জোড়ার ফেরােম্যাঙ্গানীজ প্ল্যান্টে , ওডিশার বস্ত্রশিল্প কেন্দ্রে  , তালচের কয়লাখনিতে এবং সম্বলপুর , আঙ্গুল , কটক , ভুবনেশ্বর , খুরদা রােড , পুরী প্রভৃতি শহরে সরবরাহ করা হয় ।
  • চিপলিমা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ হীরাকুঁদ বাঁধের দক্ষিণে এই পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায়ে চিপলিমা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়িয়া উঠেছে । এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭২ মেগাওয়াট ।
  • জলসেচ ও খাল খননঃ হীরাকুঁদ বাঁধের পশ্চাতের জলাধার থেকে বরাগড় , সম্বলপুর ও সাসনে তিনটি প্রধান খাল কাটা হয়েছে । এই তিনটি খালের মধ্যে বরাগড় খালের মধ্য দিয়ে সর্বাপেক্ষা অধিক জল পরিবাহিত হয় । এই খাল তিনটি থেকে আবার বহু শাখাখাল বিভিন্ন দিকে বিস্তার লাভ করেছে । এর ফলে প্রথম পর্যায়ে ওড়িশায় সম্বলপুর ও বলাঙ্গীর জেলার প্রায় ২৫৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে জলসেচ করা হচ্ছে । প্রথম পর্যায়ের কাজের সাথে ওড়িশা সরকার কর্তৃক গৃহীত মহানদী ব – দ্বীপ জলসেচ প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে । এই প্রকল্পের ফলে কটক ও পুরী জেলার মধ্যে প্রায় ৫৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে জলসেচ করা হচ্ছে ।
  • উপকৃত অঞ্চলঃ মহানদী পরিকল্পনা রূপায়িত হওয়ায় সমগ্র মহানদী – উপত্যকা অঞ্চল উপকৃত হয়েছে । ওড়িশা রাজ্যে প্রচুর খনিজ ও বনজসম্পদ বিদ্যমান । এই পরিকল্পনার ফলে এই খনিজসম্পদগুলিকে কেন্দ্র করে নানারকম শিল্প গডিয়া উঠেছে । ব – দ্বীপ অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এবং খাদ্যশস্যেরও উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে । এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনার ফলে প্রায় ৫৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে জলসেচ করা যাচ্ছে ।

উপরোক্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো বিস্ময় থাকলে নীচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কাছে সাহায্য দায়ক মনে হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করে তাদের কেও সাহায্য করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।