দক্ষিণ ভারতের নদ নদী?

0
দক্ষিণ ভারতের নদ নদী সম্পর্কে লেখ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে।দক্ষিণ ভারতের নদ নদী  নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

দক্ষিণ ভারতের নদ নদী সম্পর্কে লেখ?

দক্ষিণ ভারত বা ভারতের উপদ্বীপ অঞ্চলের নদীগুলি প্রধানতঃ দক্ষিণ ভারতের প্রধান জলবিভাজিকা সহাদ্রি বা পশ্চিমঘাট পর্বত এবং বিন্ধ্য , মহাদেব , মহাকাল , সাতপুরা প্রভৃতি গৌণ জলবিভাজিকা থেকে উৎপন্ন হয়েছে । এই অঞ্চলের নদীগুলির মধ্যে বঙ্গোপসাগরে পতিত পূর্ববাহিনী নদী সুবর্ণরেখা , ব্রাহ্মণী , বৈতরণী , মহানদী , গোদাবরী , কৃষ্ণা ও কাবেরী এবং আরবসাগরে পতিত পশ্চিমবাহিনী নদী নর্মদা , তাপী ( তাপ্তী ) , সবরমতী , শরাবতী এবং কচ্ছের রণে পতিত লুনি প্রভৃতি নদী বিশেষ উল্লেখযােগ্য । পূর্ববাহিনী নদীগুলি পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির তুলনায় প্রশস্ত এবং এদের অনেকের মােহনায় ব – দ্বীপ গড়ে উঠেছে । পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মােহনায় কিন্তু ব – দ্বীপ দেখতে পাওয়া যায় না । কেবল কচ্ছের রণে পতিত লুনি নদীর মােহনায় একটি ক্ষুদ্র ব – দ্বীপের অবস্থান প্রমাণ করে যে , লুনি এক সময় প্রচুর জল বহন করত । এই সকল নদী ব্যতীত পশ্চিমঘাট পর্বত থেকে উৎপন্ন বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী পশ্চিম উপকূলে পতিত হয়েছে । নিচে ভারতের উপদ্বীপ অঞ্চল বা দক্ষিণ ভারতের নদ নদী সম্পর্কে আলোচনা করা হল

পূর্ববাহিনী নদীঃ

  • মহানদীঃ এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৪২ কিঃ মিঃ । সাতপুরা পর্বতের অমরকণ্টকের নিকট থেকে মহানদী উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশার মধ্য দিয়া প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । সুবর্ণরেখা ( ৪৩৩ কিঃ মিঃ ) পূর্ব – ভারতের মালভূমির অন্তর্গত ছােটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে বিহার ও ওড়িশার মধ্য দিয়া প্রবাহিত হয়ে বালেশ্বরের নিকট বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । এর উচ্চপ্রবাহে রাঁচীর নিকট হুড্রু জলপ্রপাত বিখ্যাত ।
  • উপনদীঃ বৈতরণী , ব্রাহ্মণী , শিবনাথ , ইব , মান্দ , হাসদো , জংক , ওং প্রভৃতি ।
  • গােদাবরীঃ এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৫৬২ কিঃ মিঃ । দক্ষিণ – ভারতের সর্বাপেক্ষা পবিত্র নদী গােদাবরী মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার ট্রিমবাক নামক স্থান হইতে উখিত হইয়া সহ্যাদ্রি পর্বতে প্রায় ২০ কিঃ মিঃ পথ গিরিখাত অতিক্রম করে নাসিক শহর অবধি প্রবাহিত হয়েছে । পরে অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহেন্দ্রীর নিকট গৌতমী , বশিষ্টি ও বৈনতেয় —এই তিনটি শাখায় বিভক্ত হইয়া ব – দ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । গোদাবরীকে ” দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা ” নামে অভিহিত করা হয় ।
  • উপনদীঃ ইন্দ্রাবতী , প্রাণহিতা ( পেনগঙ্গা , ওয়ার্ধা ও বেনগঙ্গার মিলিত প্রবাহ ) ও মঞ্জিরা এর প্রধান উপনদী ।
  • কৃষ্ণাঃ এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৪০০ কিঃ মিঃ । কৃষ্ণা নদীর উৎপত্তি হয়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতে মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর নামক শৈল – শিখর থেকে । কৃষ্ণা পূর্ববাহিনী হয়ে মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । বিজয়ওয়াড়া শহরের পর থেকেই কৃষ্ণার মােহনায় একটি ব – দ্বীপ গড়ে উঠেছে এবং এটি গােদাবরী ব – দ্বীপের ঠিক দক্ষিণেই অবস্থিত ।
  • উপনদীঃ কৃষ্ণার একটি উপনদী ভীমা , ভীমাশঙ্কর নামক স্থান থেকে এবং অপর একটি উপনদী তুঙ্গভদ্রা ( তুঙ্গ এবং ভদ্রা এই দুইটি নদীর মিলিত প্রবাহ ) গঙ্গামূলা শৃঙ্গ থেকে সৃষ্ট । কয়না ও ঘাটপ্রভা নদী দুইটি কৃষ্ণার উৎসস্থলে মিলিত হয়েছে । এছাড়াও বেদবতী , মুসি , মালপ্রভা , ঘাটপ্রভা , পঞ্চগঙ্গা , দুধগঙ্গা প্রভৃতি কৃষ্ণার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপনদী ।
  • কাবেরীঃ এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০৫ কিঃ মিঃ ।  কাবেরী নদী কর্ণাটক রাজ্যের কুর্গ জেলায় ব্রহ্মগিরি ( ১,৩৪১ মিঃ ) পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । এর উচ্চপ্রবাহে অনেকগুলি জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে । এর মধ্যে শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত উল্লেখযােগ্য । কাবেরী নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃষ্ণরাজ সাগর নামক কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি করে এর সাথে শিবসমুদ্রমকে যুক্ত করা হয়েছে । কাবেরীর মােহনায় ব – দ্বীপ অবস্থিত । তিরুচিরাপল্লীর পশ্চিমে কাবেরী দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে । উত্তরদিকের অংশকে বলা হয় কোলেরুণ এবং দক্ষিণ দিকের অংশকে বলা হয় কাবেরী । এই দুই শাখার মিলনস্থল থেকে ৭০ কিঃ মিঃ নিম্ন – অববাহিকায় এরা পুনরায় মিলিত হয়েছে । এদের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আছে শ্রীরঙ্গম দ্বীপ । এর পর কোলেরুণ নদী উত্তর – পূর্বমুখী হইয়া সমুদ্রে পতিত হয়েছে । অপরদিকে কাবেরী নদী দক্ষিণমুখী হয়ে সমুদ্রে পড়েছে । শাখানদীগুলি কাবেরী ব – দ্বীপের জলসেচ – ব্যবস্থায় উল্লেখযােগ্য স্থান দখল করে । 
  • উপনদীঃ হিমবতী , বেদবতী , সিমসা ও ভবানী কাবেরীর উপনদী ।
  • পূর্ববাহিনী অন্যান্য নদীগুলির মধ্যে পেন্নার , পােন্নায়ার , পালার , তাম্ৰপর্ণী , ভাইগই প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য । তবে এদের দৈর্ঘ্য তুলনামূলকভাবে কম । 

পশ্চিমবাহিনী নদীঃ

  • নর্মদাঃ এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৩১২ কিঃ মিঃ ।  অমরকন্টক ( ১,৯৫৭ মিঃ ) পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মধ্যে অবস্থিত গ্রস্ত – উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে । নর্মদা জব্বলপুরের নিকট মার্বেল পাহাড় ভেদ করে গভীর খাদ কেটে প্রবাহিত হয়েছে । এই পাহাড় থেকে নামার সময় নর্মদা সুন্দর একটি জলপ্রপাতের সৃষ্টি করিয়াছে । নর্মদার মােহনায় কাম্বে উপসাগরে ভারুচ ( পূর্বনাম ব্রোচ ) একটি উল্লেখযােগ্য শহর ও বন্দর ।
  • উপনদীঃ হিরণ , বর্ণা , কোলার , শের , বানজের প্রভৃতি নর্মদার উল্লেখযোগ্য উপনদী ।
  • তাপী বা তাপ্তিঃ এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২৪ কিঃ মিঃ । তাপ্তি মহাদেব পাহাড় ( ৭৬২ মিঃ ) থেকে উৎপত্তি লাভ করে সাতপুরা ও অজন্তা পাহাড়ের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিমে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে । কাম্বে উপসাগরে তাপীর তীরে সুরাট একটি শহর ও বন্দর ।
  • উপনদীঃ পুনা , পাটকি , গির্না , বেতাল , অমরাবতী প্রভৃতি তাপীর উল্লেখযোগ্য উপনদী ।
  • সবরমতীঃ এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪১৪ কিঃ মিঃ । আরাবল্লী পর্বত থেকে উৎপত্তি লাভ করে গুজরাট সমভূমির মধ্য দিয়ে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে ।
  • মাহীঃ মাহী নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৩৩ কিঃ মিঃ । এটি বিন্ধ্য পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে ।
  • পশ্চিম উপকূলে পতিত অন্যান্য অল্প দৈর্ঘ্যের নদীগুলির মধ্যে উত্তর কঙ্কণে বৈতর্ণ , উলহাস , বশিষ্টি ও সাবিত্রী , উত্তর কর্ণাটকে সরাবতী , কালিন্দি , সরস্বতী ও নেত্রবতী বিশেষ উল্লেখযােগ্য ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। প্রশ্নগুলি নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।