হিমালয়ের নদীবিন্যাস ?

0
হিমালয়ের নদীবিন্যাসের ক্রমবিবর্তন লেখ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। হিমালয়ের নদীবিন্যাসের ক্রমবিবর্তন নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

Advertisement

হিমালয়ের নদীবিন্যাসের ক্রমবিবর্তন লেখ?

হিমালয় সম্পর্কে জানার শুরুতেই এই উল্লেখযোগ্য পর্বতমালার নদীগুলিও ভূ – বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠে । বিশেষতঃ তিব্বত মালভূমিতে উৎপন্ন সিন্ধু , সাংপাে ও শতদ্রু এই তিনটি নদীই এখানে প্রধান তাৎপর্যপূর্ণ । যদিও এই নদীগুলি ছাড়া আরও অন্যান্য নদী সুউচ্চ ও বহু শিখরমণ্ডিত পর্বতমালাকে অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে । নিচে হিমালয়ের নদীবিন্যাসের ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

১১১১ খ্রীষ্টাব্দে E. H. Pasco ও C. E. Pilgrim হিমালয়ের নদীবিন্যাসের ক্রম বিবর্তনের একটি সুচিন্তিত মতবাদ প্রকাশ করেন । এই মতবাদে আলােচনার মূল বিষয় হল বালুকা , নুড়ি ও প্রস্তরখণ্ডের বিশাল গভীরতা , যার দ্বারা শিবালিক পর্বত গঠিত হয়েছে । পলিশঙ্কুতে ব্যাপক আকারে বাহিত পদার্থের সঞ্চয়কে এর কারণ হিসাবে ধরা হয়েছে । এই পদার্থসমূহ হিমালয় থেকে ক্ষয়িত ও নদী দ্বারা বাহিত হয়ে হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলকে গঠিত করেছে ।

Pasco ও Pilgrim- এর মতে , এই সঞ্চয় ঘটেছিল একটি বৃহৎ নদী উপত্যকায় — যে নদীটি Pasco – র “ সিন্ধু – ব্ৰহ্মপুত্ৰ ” এবং Pilgrim – এর “ শিবালিক ” নদী , যা হিমালয় এবং গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের মধ্য দিয়ে উত্তর – পশ্চিমে প্রবাহিত ছিল । এই গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ড আরাবল্লী পর্বতরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । পরে বহিঃহিমালয়ের পাদদেশ সম্প্রসারণের ফলে এটি দক্ষিণে সরে যায় । উত্তর থেকে আগত প্রধান নদীটির উপনদীগুলি সক্রিয়ভাবে সঞ্চয়কার্যে অংশ নেয় এবং স্পষ্টতই নিম্ন যমুনা ও গঙ্গাকে উপদ্বীপের উত্তর পার্শ্বে সরে যেতে হয় । নদীটি সিন্ধু রেখা বরাবর তবে আরও পশ্চিমে আরব সাগরে গিয়ে পড়ে । এয়ােসিন ( Eocene ) যুগে নিম্ন সিন্ধু – অববাহিকা অঞ্চল সিন্ধু উপসাগরের দ্বারা অধিকৃত ছিল , যা পরবর্তীকালে নদীবাহিত পদার্থসমূহ দ্বারা ভরাট হয়ে গেছে । Pilgrim বলেন , কাংড়া ও ভূটানে উর্দ্ধ শিবালিকে ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড সঞ্চয়ের গভীরতা নদীগুলির একদা উত্তর – পশ্চিমে প্রবাহকে নির্দেশ করে ।

বিশাল উপত্যকার দক্ষিণ পার্শ্বের বিস্তার রাজমহল পাহাড় ও শিলং মালভূমির পলল আস্তরণ দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব হয় । Pilgrim মনে করেন , উপদ্বীপ অঞ্চলটি তখন বঙ্গোপসাগরের অধিকাংশে প্রসারিত ছিল । মহানদীর প্রশস্ততাও বর্তমান অপেক্ষা এর পূর্বেকার অধিকতর দৈর্ঘ্যকেই নির্দেশ করে । স্থানান্তরজনিত বর্তমান নদী – বিন্যাসের কারণ হিসাবে Pilgrim ব্যাখ্যা করেছেন যে , ভূ – আন্দোলন দ্বারা কাংড়ার উত্তর পশ্চিমে শিবালিক নদীর গতিপথ রুদ্ধ হয় , যার ফলে রাজমহল ও শিলং জলবিভাজিকা থেকে দক্ষিণবাহিনী শক্তিশালী নদীর ক্ষয়কার্য পশ্চাৎদিকে অগ্রসর হয় এবং উত্তর পশ্চিমে ভূ – উত্থানের ফলেও নদী – বিন্যাসটি বর্তমান গঙ্গা – ব্রহ্মপুত্র ব – দ্বীপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । বঙ্গোপসাগরের তলদেশ বসে গেলে পুনর্যৌবন সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে । তাই Evan ও Oldham বলেছেন যে , ভূ – আন্দোলনই পূর্বেকার নদী – বিন্যাসের পরিবর্তনের অধিকতর সম্ভাবনাময় কারণ ।

সিন্ধু – গঙ্গা সমভূমির উত্তর পার্শ্বে অনেক নদীতেই উত্তর – পশ্চিমদিক নির্দেশক সুস্পষ্ট V – আকৃতি লক্ষ্য করা যায় । এইগুলির অবস্থান সাধারণভাবে শিবালিক পলল সীমানায় । এই V – গুলির উত্তর সীমান্তগুলি Pasco- র মতে Indo – Brahm – এর পুরোনো দক্ষিণপার্শ্বস্থ উপনদীসমূহের সাক্ষ্যবাহী , যা শিবালিক পাহাড়ের উত্থানের ফলে বর্তমানে আরও সুস্পষ্ট ও স্থায়ী হইয়াছে । Indo Brahm – এর মধ্যভাগ নিম্ন Indo Brahm – এর বামপার্শ্বস্থ উপনদীগুলি দ্বারা দক্ষিণ – পশ্চিম দিক থেকে এবং দক্ষিণ – পূর্ব দিক থেকে এটি গঙ্গার উর্ধপ্রবাহের উপনদী দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছে । পটওয়ার মালভূমি যে ভূ – আন্দোলনে উখিত হয়েছে ঐ একই আন্দোলনে গঙ্গার এই উপনদীগুলি পুনর্যৌবন লাভ করে থাকতে পারে । এই সময় পূর্ব পার্শ্বে রাজমহল – শিলং জলবিভাজিকাটিকে বিচ্ছিন্ন করে গঙ্গা – ব্রহ্মপুত্র নদী দুইটি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে । এটি অবশ্য কিছুটা পুনর্যৌবনকেই নির্দেশ করে । পশ্চিমপার্শ্বস্থ শক্তি প্রবল উর্ধপ্রবাহে ক্রমশঃ গঙ্গা – যমুনা এলাকায় Indo Brahm – এর দক্ষিণপার্শ্বস্থ উপনদীগুলিকে অধিকার করে নেয় । Pasco পেমাকাই হইতে গিলগিট পর্যন্ত প্রবাহিত একটি বৃহৎ তিব্বতী নদীর উল্লেখ করেছেন । Pasco- র মতে , এই আদি তিব্বতীয় নদীটি ওক্সাসে প্রবাহিত হয়ে থাকতে পারে অথবা ফুটোপাস কিংবা কারনালি , শতদ্রু বা উর্ব সিন্ধু নদ দ্বারা সমভূমিতে নেমে থাকতে পারে । Pasco মনে করেন , এই প্রাথমিক তিব্বতীয় নদীটি পরে ইরাবতী , চেন্দুইন , মেঘনা , কালী , গণ্ডক , শতদ্রু ও সিন্ধু নদের দ্বারা বিভক্ত হয় ।

কিন্তু Annadale এবং De Terra উপরােক্ত মতের সমালােচনা করেন । Annadale মনে করেন , উপদ্বীপ ও অবশিষ্ট ভারতবর্ষের মধ্যে একটি দীর্ঘ অবনমিত অঞ্চল অথবা প্রণালী ছিল , যা ক্রমশ সংকীর্ণ হতে থাকে এবং অবশেষে হিমালয়ের গঠন অগ্রসর হলে এটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে বর্তমানের বিন্যাসপ্রাপ্ত হয় । Annadale- এর পর De Terra ১৯৩৪-৩৫ খ্রীষ্টাব্দে এই সমস্যাটির পুনর্বিশ্লেষণ করেন । তিনি মনে করেন যে , এটি পূর্ববর্তী বিন্যাস ( Antecedent System ) – এর পর্যায়ে পড়ে । শতদ্রুকে Pasco তিব্বতীয় নদীটির একটি অধিকৃত অংশ হিসাবে মনে করেছেন । Davis মনে করেন শতদ্রু হল হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির মধ্যে কনিষ্ঠতম এবং প্রাচীন গণ্ডোয়ানা চ্যুতিরেখা বরাবর প্রধান হিমালয় বসে গেলে এর সৃষ্টি হয় ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। প্রশ্নগুলি নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।