উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমি কি ?

0
উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমি সম্পর্কে লেখ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমি বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

Advertisement

উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমি সম্পর্কে লেখ?

অবস্থান ও আয়তনঃ ভারতের উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে দক্ষিণপথ মালভূমির অন্তর্গত মধ্য – ভারতের উচ্চভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চল ‘ উত্তর – ভারতের বিশাল সমভূমি ’ নামে পরিচিত । এই সমভূমি পূর্ব – পশ্চিমে প্রায় ২,৫০০ কিলােমিটার দীর্ঘ এবং উত্তর – দক্ষিণে প্রায় ২৪ ০-৩২০ কিলােমিটার প্রশস্ত । সমগ্র সমভূমির আয়তন প্রায় ৬,৫২,০০০ বর্গ কিলােমিটার । এই সমভূমির পশ্চিম ও দক্ষিণ – পশ্চিমের অংশ যথাক্রমে পাঞ্জাব সমভূমি ও শুষ্ক রাজস্থানের সমভূমির অন্তর্গত এবং ইহার অধিকাংশ দক্ষিণ – পশ্চিমে ঢালু । পাঞ্জাব সমভূমি সিন্ধুর বিভিন্ন উপনদীর ( শতদ্রু , বিপাশা প্রভৃতি ) পলিদ্বারা গঠিত । এটি দক্ষিণ – পশ্চিমে রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমিতে মিশেছে । রাজস্থান সমভূমির পশ্চিম অংশ সিন্ধু – উপত্যকায় ( পাকিস্তান ) এবং দক্ষিণ অংশ কচ্ছের রণে মিলিত হয়েছে । দিল্লী থেকে আরাবল্লী পাহাড় পর্যন্ত একটি শৈলশিরা পাঞ্জাব সমভূমি ও গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্যে একটি গৌণ জলবিভাজিকারূপে অবস্থান করছে । পাঞ্জাব সমভূমির পূর্ব সীমানায় যমুনা নদী থেকে দক্ষিণ – পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিশাল অঞ্চল গঙ্গা ও তাহার বিভিন্ন উপনদী ও শাখা – নদীর পলিদ্বারা গঠিত । এটিই বিখ্যাত গাঙ্গেয় সমভূমি । গাঙ্গেয় সমভূমি উত্তরপ্রদেশ , বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অবস্থিত এবং এর মােট আয়তন ৩,৫৭,০০০ বর্গ কিলােমিটার । জনসংখ্যা ও কৃষিজ – সম্পদে এই সমভূমি পৃথিবীর মধ্যে অদ্বিতীয় । গাঙ্গেয় সমভূমির উত্তর – পূর্বে অসমে ব্ৰহ্মপুত্র নদ ও তাহার বিভিন্ন উপনদী ও শাখা – নদীবাহিত পলিদ্বারা গঠিত সমভূমি ব্ৰহ্মপুত্ৰ – উপত্যকা নামে পরিচিত । এই উপত্যকাও ‘ উত্তর – ভারতের বিশাল সমভূমির অন্তভুক্ত । এই সমতলক্ষেত্র প্রায় ৭০০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ এবং ৮০ কিঃ মিঃ প্রশস্ত । এর আয়তন প্রায় ৫৬,০০০ বর্গ কিলােমিটার ।

আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যঃ ভারতের বিশাল সমভূমির ভূ – প্রকৃতিগত বৈচিত্র্য বিশেষ না থাকায় একে ক্ষুদ্রতর অঞ্চলে বিভক্ত করা খুবই কঠিন ব্যাপার । তবে বৃষ্টিপাত , কৃষিজ পণ্যের তারতম্য ও কিছুটা ভূ – প্রকৃতির বৈচিত্র্য অনুসারে এই সমভূমিকে নিম্নলিখিত অঞ্চলে বিভক্ত করা যায় । যথা – ক) রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমি , খ) পাঞ্জাব হরিয়ানা সমভূমি , গ) গঙ্গা সমভূমি ( উচ্চ , মধ্য ও নিম্ন – গাঙ্গেয় সমভূমি ) ও ঘ) ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা । নিচে এগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল –

পশ্চিমের সমভূমি বা রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমিঃ

পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শুষ্ক সমভূমি দক্ষিণে ক্রমশঃ রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমিতে গিয়া মিশেছে । এটাই পশ্চিমের সমভূমি বা রাজস্থানের শুদ্ধ সমভূমি । এই অঞ্চল দৈর্ঘ্যে উত্তর পূর্ব হইতে দক্ষিণ – পশ্চিমে প্রায় ৬,৪০০ কিঃ মিঃ এবং ইহার গড় – বিস্তার প্রায় ৩০০ কিঃ মিঃ । সমগ্র অঞ্চল প্রায় ১,৭৫,০০০ বর্গ কিলােমিটার স্থান অধিকার করে আছে । এই অঞ্চল সিন্ধু – গঙ্গা সমভূমিরই একটি অংশ , তবে পার্থক্য হল এই যে , এই অঞ্চলে ভূ – পৃষ্ঠের জলপ্রবাহের কার্য অপেক্ষা বায়ুপ্রবাহের ক্রিয়াকলাপের প্রাধান্যই অধিক । এই শুষ্ক সমভূমির অধিকাংশই পার্মো – কার্বনিফেরাস যুগ  থেকে প্লিসটোসেন যুগ পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান করেছিল । তার পরে প্লিসটোসেন যুগে ভূমিভাগ সমুদ্রের তলদেশ থেকে উপরে উখিত হওয়ার পর এই অঞ্চলের উপর একটি স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র ( Normal Cycle of Erosion ) ক্রিয়া করে থাকে । সরস্বতী এবং দ্রীশদবতী প্রভৃতি নদীসমূহের শুষ্ক উপত্যকার অবস্থান পূর্বেকার আর্দ্র জলবায়ুর অস্তিত্বের কথা এবং অঞ্চলটির উর্বরতার কথা প্রমাণ করে থাকে । একমাত্র উল্লেখযােগ্য নদী লুনির ঊর্দ্ধ প্রবাহের জল মিষ্ট , কিন্তু নিম্নপ্রবাহে , বিশেষত বালতােরার পর হঠাৎ দক্ষিণে বাঁক নিয়ে কচ্ছের রণে যেখানে পতিত হয়েছে সেই অংশের জল লবণাক্ত । এই কারণে নদীটির নাম লুনি হয়েছে । লুনির মােহনায় একটি ছােট্ট ব – দ্বীপের অবস্থান প্রমাণ করে যে , এক সময় নদীটি প্রচুর জল বহন করত ।

এই অঞ্চলের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী । বৃষ্টির সামান্য জল নদী দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্রে পৌছাতে না পেরে দেশের অভ্যন্তরে নিম্নভূমিতে এসে জমা হয় এবং হ্রদের সৃষ্টি করে । এইভাবে সৃষ্ট বহু লবণ হ্রদ বা ধান্দ , এই অঞ্চলে দেখা যায় । দিদওয়ানা , পাচপদ্র , লুঙ্কাবংশতাল হল উল্লেখযােগ্য লবণ হ্রদ । এই সকল হ্রদের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করা হয় ।

এই অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে চলমান বালির পাহাড় দেখিতে পাওয়া যায় । এদের ধ্রিয়ান ( Dhrian ) বলে । চলমান বালির পাহাড়গুলি ( Shifting Dunes ) দক্ষিণ – পশ্চিম থেকে উত্তর – পূর্বে বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়িরূপে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছে । অনেক সময়ে বায়ুপ্রবাহের আড়াআড়িভাবে অবস্থিত তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান অবস্থান করতেও দেখা যায় । বার্খান অঞ্চলে বালিয়াড়িগুলি ৫০ মিটার থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে । এই অঞ্চলে বহু প্লায়া হ্রদ ( রণ ) দেখতে পাওয়া যায় ।

পাঞ্জাব – হরিয়ানা সমভূমিঃ

পাঞ্জাব – হরিয়ানা সমভূমি শতদ্রু , বিপাশা এবং ইরাবতী নদীর দ্বারা বাহিত দ্রব্যাদি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়েছে । এই সমভূমি অত্যন্ত সমতল এবং গড় উচ্চতা ২০০ হইতে ২৪০ মিটারের মধ্যে । এই সমভূমি অঞ্চলের মাঝে মাঝে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট সরু ও লম্বা সমতলক্ষেত্র দেখতে পাওয়া যায় । এদের বেট ( Bets ) বলে । এই বেটগুলি ১ কিলোমিটার থেকে ১২ কিলােমিটারের মত চওড়া । এদের দুই পার্শ্বে ৫ মিটার থেকে ১০ মিটার উঁচু ঢিবির অবস্থান দেখা যায় । অঞ্চলের উত্তর – পূর্বে বিভিন্ন দোয়াব সমভূমি দেখতে পাওয়া যায় । ইরাবতী এবং বিপাশা নদীর মধ্যে অমৃতসরকে কেন্দ্র করিয়া বারিদোয়াব , তার পূর্বে বিপাশা ও শতদ্রুর মধ্যে পাঞ্জাবের সর্বাপেক্ষা উন্নত অঞ্চল বিস্ত দোয়াব অবস্থান করছে । বিস্ত দোয়াবের দক্ষিণে অবস্থান করছে মালব বা মালওয়া সমভূমি । এই দোয়াব অঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয় ।

গঙ্গা সমভূমিঃ

গঙ্গা সমভূমি উচ্চ , মধ্য ও নিম্ন — এই তিনটি অংশে বিভক্ত । যথা

  • উচ্চ – গাঙ্গেয় সমভূমিঃ এই সমভূমির পশ্চিম সীমান্তে যমুনা নদী প্রবাহিত এবং এটি এলাহাবাদের নিকট গঙ্গার সহিত মিলিত হয়েছে । পূর্বদিকে ২০০ মিটার সমােন্নতি রেখা এই অঞ্চলকে মধ্য – গাঙ্গেয় সমভূমি থেকে পৃথক করছে । গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল গঙ্গা – যমুনা দোয়াব অঞ্চল রূপে পরিচিত । উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির এটিই সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য অংশ । গঙ্গা – যমুনা দোয়াবের উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল থেকে দক্ষিণে গঙ্গা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল আবার দুইটি অংশে বিভক্ত । পশ্চিমের অংশ রােহিখণ্ড সমভূমি এবং পূর্বের অংশ অযােধ্যা সমভূমি নামে পরিচিত । রামগঙ্গা , গােমতী এবং সারদা নদীগুলি এই অঞ্চল দিয়া প্রবাহিত । সমগ্র উচ্চ – গাঙ্গেয় সমভূমি একটি বৈচিত্র্যহীন সমভূমি এবং এটি উত্তর – পশ্চিম হইতে দক্ষিণ – পূর্বে ঢালু । দুই নদীর মধ্যবর্তী ( দোয়াব ) অপেক্ষাকৃত উচ্চ অংশে প্রাচীন পলি ‘ ভাঙ্গর ’ , নদী তীরবর্তী অঞ্চলে নবীন পলি ‘ খাদার ’ এবং তরাই অঞ্চলে ভাবর ’ দ্বারা গঠিত উচ্চভূমি সমভূমির একঘেয়েমির মধ্যে বৈচিত্র্য এনেছে ।
  • মধ্য – গাঙ্গেয় সমভূমিঃ এই সমভূমির পশ্চিমাংশে ( উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশ ) অযােধ্যা সমভূমির পূর্বাংশ অবস্থান করছে । বাকী অংশ বিহার রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত । এই সমভূমির পূর্বদিকে রাজমহল পাহাড়ের অবস্থানের ফলে সমভূমি কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে । বিহার অংশে গঙ্গার উত্তর দিকের সমভূমি অঞ্চল উত্তর বিহার সমভূমি এবং গঙ্গার দক্ষিণের সমভূমি অঞ্চল দক্ষিণ বিহার সমভূমি নামে পরিচিত । এই মধ্য – গাঙ্গেয় সমভূমিও উচ্চ – গাঙ্গেয় সমভূমির ন্যায় বৈচিত্র্যহীন । কেবল উত্তরে শিবালিক পর্বতের পাদদেশে এবং দক্ষিণে মালভূমির প্রান্তদেশে কিছু উচ্চভূমির অবস্থান বৈচিত্র্য এনেছে । এই অঞ্চলে খাদার বা নবীন পলল মৃত্তিকা অধিক দেখতে পাওয়া যায় । এই সমভূমি অঞ্চলের মধ্য দিয়া ক্ষুদ্র – বৃহৎ এত অধিক সংখ্যক নদী প্রবাহিত হয়েছে যে , একে অনেক সময় নদ – নদীর দেশরূপে অভিহিত করা হয় । বিভিন্ন নদীর মধ্যে গঙ্গাই প্রধান । এটি সমভূমির দক্ষিণ সীমান্তের নিকট দিয়ে একে বেঁকে প্রায় পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত । গঙ্গার সাথে উত্তর দিক থেকে গােমতী , ঘর্ঘরা বা সরযু , গণ্ডক , কুশী ( কোশী ) এবং উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল থেকে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্বত্য নদী এবং দক্ষিণ থেকে শােন নদী এসে মিলিত হয়েছে । এই সকল নদীর মিলিত প্রচেষ্টায় উত্তরে নেপাল হিমালয়ের পাদদেশে প্রায় ২,০০০ মিটার গভীর এক খাদ পলি সঞ্চিত হয়ে ভরাট হয়েছে । এইরূপে উত্তর বিহার সমভূমি গঠিত হয় । এই সমভূমির পশ্চিমাংশের ঢাল দক্ষিণ – পশ্চিমে হলেও পূর্বাংশে এর ঢাল দক্ষিণমুখী । ছাপরার কিছু পূর্ব হইতে খাগরিয়া পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে বেশ কিছু জলাভূমি অবস্থান করতে দেখা যায় । এই জলাভূমিগুলি গঙ্গার সমান্তরালে অবস্থান করছে । এরা স্থানীয় ভাষায় কাউর বা তাল নামে পরিচিত । এদের মধ্যে কতকগুলি এত গভীর হয় যে , সারা বৎসরই এতে জল থাকে ( যেমন , কাবার তাল ) । কাউর অঞ্চলের দক্ষিণে গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চলে ভূমিভাগ ক্রমশঃ উঁচু হয়ে স্বাভাবিক বাঁধের ( Levee ) সৃষ্টি করেছে । দক্ষিণ বিহার সমভূমি রাজমহল পাহাড়ের পশ্চিমে ক্রমশঃ বিস্তৃত হয়েছে । এর সর্বাপেক্ষা অধিক বিস্তার হল ১২০ কিঃ মিঃ । এই অঞ্চলের সাধারণ ঢাল হইল উত্তর ও উত্তর – পূর্বে । উত্তর বিহার সমভূমির ন্যায় এই সমভূমি অঞ্চল তত বৈচিত্র্যহীন নহে । তবে এখানেও গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের দক্ষিণে অবনমিত অংশে জলাভূমি অবস্থান করতে দেখা যায় । পাটনা এবং মােকামার নিকট এইরূপ জলাভূমি বা তাল অঞ্চল দেখতে পাওয়া যায় ।
  • নিম্ন – গাঙ্গেয় সমভূমিঃ ভূমিরূপের তারতম্য অনুসারে নিম্ন – গাঙ্গেয় সমভূমিকে (i) উত্তরবঙ্গ সমভূমি , (ii) ব – দ্বীপ অঞ্চল ও (iii) রাঢ় সমভূমি — এই তিনটি উপ – অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।

(i) উত্তরবঙ্গ সমভূমিঃ উত্তর পূর্ব – হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল থেকে দক্ষিণে গঙ্গা ব – দ্বীপের উত্তর সীমা পর্যন্ত এই অঞ্চল বিস্তৃত । এর আয়তন হল প্রায় ২৩,০০০ বর্গ কিলােমিটার । এই অঞ্চলের পূর্বদিকে ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন উপনদী এবং পশ্চিমে গঙ্গার বিভিন্ন উপনদী প্রবাহিত । সমগ্র অঞ্চল পূর্ব – হিমালয় থেকে আসা তিস্তা , জলঢাকা , তাের্সা প্রভৃতি বিভিন্ন শক্তিশালী নদীর দ্বারা বাহিত প্রস্তরখণ্ড ও ক্ষয়প্রাপ্ত দ্রব্য সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়েছে । এর উত্তর প্রান্ত পশ্চিম দুয়ার নামে পরিচিত । দুয়ার অঞ্চলের দক্ষিণে ভূমিভাগ যথেষ্ট সমতল হয়ে গেছে এবং এই অংশে বর্ষাকালে মাঝে মাঝে জলাভূমি অবস্থান করতেও দেখা যায় । আরও দক্ষিণে গঙ্গার প্রাচীন ব – দ্বীপ অঞ্চল যা প্লিসটোসেন উপযুগে গঠিত হয় এবং পরে উখিত ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চ তরঙ্গায়িত সমভূমিরূপে অবস্থান করছে । এই সমভূমি বারিন্দ সমভূমি নামে পরিচিত ।

(ii) ব – দ্বীপ অঞ্চলঃ গঙ্গার ব – দ্বীপ অঞ্চল বলিতে উহার দক্ষিণের সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পলিগঠিত অঞ্চলকে বুঝায় । এই অঞ্চল এত নীচু ও সমতল যে সমুদ্রপৃষ্ঠ যদি ৬ মিটার উপরে উঠে তা হলে কলিকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত হয়ে যাবে । এই অঞ্চলের উত্তরাংশে নদীগুলি মৃতপ্রায় এবং ইহাদের ব – দ্বীপ গঠনের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে । কিন্তু দক্ষিণে মােহনার দিকে নদীগুলি ও তাহাদের শাখানদীগুলি এখনও যথেষ্ট সক্রিয় আছে । দক্ষিণের অংশে ব – দ্বীপ গঠনের কাজ এখনও সক্রিয়ভাবে চলছে । পৃথিবীর যে কোন বৃহৎ নদীর ব – দ্বীপ অঞ্চলের ন্যায় এখানেও সমুদ্রের নিকটবর্তী অংশে বিভিন্ন শাখানদী পরস্পরকে ছেদ করে জালের ন্যায় বিস্তার লাভ করেছে । নদীর মােহনায় অসংখ্য খাঁড়ি , দ্বীপ , চর ও লােনা জলাভূমি দেখতে পাওয়া যায় । গভীর জঙ্গলপূর্ণ ব – দ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্ত সুন্দরবন ’ নামে পরিচিত ।

(iii) রাঢ় সমভূমিঃ ভাগীরথী – হুগলীর পশ্চিমে অবস্থিত নিম্নভূমি গঙ্গা ব – দ্বীপের অন্তভুক্ত না হলেও এটি যথেষ্ট সমতল । ঢেউ খেলানাে এই রাঢ় অঞ্চল পশ্চিমে ৫০ মিটার সমােন্নতিরেখা থেকে পূর্বে এবং দক্ষিণ – পূর্বে ভাগীরথী – হুগলীর তীরভাগ পর্যন্ত ঢালু হয়ে গেছে । পশ্চিমের ছােটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে আসা বাঁশলই , ব্রাহ্মণী , দ্বারকা , অজয় , দামােদর , শিলাই , দ্বারকেশ্বর , কংসাবতী প্রভৃতি নদীর দ্বারা বাহিত প্রাচীন পলল ও লাল দো – আঁশ মৃত্তিকা এবং কিছু কিছু নবীন পলল মৃত্তিকা সঞ্চিত হয়ে সমগ্র অঞ্চল গঠিত হয়েছে । বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ফলে ভূমিভাগ মাঝে মাঝে ঢালু হয়ে গেছে । আবহবিকারে বহু স্থানে মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ল্যাটারাইট মৃত্তিকায় পরিণত হয়েছে ।

ব্ৰহ্মপুত্ৰ সমভূমিঃ

এই সমভূমি অঞ্চলও উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমির অন্তভুক্ত । তিনদিক পর্বতবেষ্টিত এই সংকীর্ণ সমভূমি অঞ্চল ব্ৰহ্মপুত্র , সিসিরি , দিবাং এবং লুহিত ও অন্যান্য বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীর পলল সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়েছে । এই অঞ্চল উত্তর – পূর্ব থেকে দক্ষিণ – পশ্চিমে ঢালু হয়ে অবশেষে উত্তরবঙ্গ সমভূমিতে মিলিত হয়েছে ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। প্রশ্নগুলি নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।