পশ্চিম হিমালয় সম্পর্কে লেখ?

0
পশ্চিম হিমালয় সম্পর্কে লেখ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই বিষয়টি ভালো ভাবে অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। পশ্চিম হিমালয়  এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

পশ্চিম হিমালয় সম্পর্কে লেখ?

সুউচ্চ পর্বতমালা , বরফাবৃত শৃঙ্গ , বন্ধুর ভূ – প্রকৃতি , পূর্ববর্তী নদী এবং উপত্যকা হিমবাহের শীর্ষদেশে বিস্তীর্ণ তুষারক্ষেত্র ইত্যাদি পশ্চিম হিমালয় জুড়ে প্রতিভাত হয় । Dr. S. P. Chatterjee পশ্চিম হিমালয় – কে নিম্নোক্ত চারটি ভাগে ভাগ করিয়াছেন । যথা – ক) উত্তর কাশ্মীর হিমালয় , খ) দক্ষিণ কাশ্মীর হিমালয় , গ) পাঞ্জাব হিমালয় এবং ঘ) কুমায়ুন হিমালয় । নিচে এগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল

  • উত্তর কাশ্মীর হিমালয়ঃ সিন্ধু নদ কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে তির্যকভাবে ৬৫০ কিলোমিটার পথ সংকীর্ণ উপত্যকা দিয়ে অতিক্রম করেছে । সিন্ধুর উত্তরে সুবিখ্যাত কারকোরাম পর্বতশ্রেণীর অবস্থান । এটি সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ও বিশাল হিমবাহ – অধ্যুষিত একটি অঞ্চল । এই হিমবাহগুলি থেকে বহু নদী উৎপন্ন হয়েছে । হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ K2 ( ৮,৬১১ মিটার ) বালটারাে হিমবাহের সীমানা থেকে উপরদিকে উঠে গেছে । ৫,৩০০ মিটার গড় উচ্চতাসম্পন্ন ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি লাদাখ কাশ্মীর হিমালয়ের উত্তর – পূর্বাংশ অধিকার করে আছে । চাঙ্গ চেনমো শৈলশ্রেণী লাদাখকে দুটি সুস্পষ্ট বিভাগে বিভক্ত করেছে । এই শৈলশ্রেণীর উত্তরে চাঙ্গ চেনমাে নদী সমতলপৃষ্ঠযুক্ত একটি অপ্রতিসম উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিম বাহিনী হয়েছে ।
  • দক্ষিণ কাশ্মীর হিমালয়ঃ ঝিলাম ও রাভি নদীর মধ্যবর্তী কাশ্মীর হিমালয়ের অন্তর্গত জম্মু পাহাড়শ্রেণী অত্যন্ত ব্যবচ্ছিন্ন এবং অধােভঙ্গ উপত্যকা প্রায়শঃ শৈলশিরার পৃষ্ঠদেশ অধিকার করেছে । দক্ষিণ প্রান্তে এরা প্রস্তরময় শুষ্ক ভূ – ভাগ “কান্দি” – অধ্যুষিত । পুঞ্চ পাহাড়শ্রেণী জম্মু পাহাড় শ্রেণীর পিছনে ৩০০ মিটার পর্যন্ত উঠে গেছে । এই পাহাড় বেলেপাথর ও শেল দ্বারা গঠিত । পিরপঞ্জল শৈলশ্রেণী প্রধান হিমালয় শ্রেণীর সাথে মিলিত হয় । পিরপঞ্জল শৈলশ্রেণী সমপ্রবণ ভাঁজ এবং সংঘট্ট চ্যুতির ফলে সৃষ্টি হয়েছে । বিখ্যাত বানিহাল গিরিপথ এই শৈলশ্রেণীকে অতিক্রম করেছে ।কাশ্মীর উপত্যকা উত্তরে প্রধান হিমালয় পর্বতশ্রেণী এবং দক্ষিণে পিরপঞ্জলের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে । এটি একটি প্রায় সমতল ডিম্বাকৃতি পৃষ্ঠদেশ সমন্বিত উপত্যকা । উপত্যকার চারদিকে হ্রদ – সঞ্চিত পদার্থসমূহ বা কারেওয়া ( KAREWAS )  ধাপে ধাপে বন্টিত । এগুলি ঝিলাম ও এর উপনদীগুলি দ্বারা উপত্যকার মধ্যবর্তী অংশ থেকে অপসৃত হয়েছে । প্রধান হিমালয় পৃষ্ঠ কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত ( ৪,১২৬ মিটার ) থেকে শুরু হয় । এটি অনেকগুলি অববাহিকা দ্বারা অধ্যুষিত ।
  • পাঞ্জাব হিমালয়ঃ এই অঞ্চল বর্তমান হিমাচল প্রদেশে অবস্থান করায় এটি হিমাচল প্রদেশ হিমালয় ‘ নামেও পরিচিত । এই অঞ্চলের সর্ব দক্ষিণে আছে শিবালিক পর্বতমালা । এর দক্ষিণ ঢাল অধিক খাড়াই , কিন্তু উত্তরদিক ক্রমশঃ ঢালু হয়ে উপত্যকায় মিশেছে । এর গড় উচ্চতা ৬০০ মিটার । শিবালিকের উত্তরে হিমাচল বা অবহিমালয়ের চারটি পর্বত – ধাওলাধর , পিরপঞ্জল , নাগটি ও মুসৌরী অবস্থান করছে । এই পর্বতগুলির ঢাল খাড়া হওয়ায় জনবসতি কম এবং অরণ্যাবৃত । ধাওলাধর ও পিরপঞ্জল পর্বত দুটির উভয় পাশে কাংড়া , চম্বা , কুলু , লাহুল প্রভৃতি উপত্যকা অবস্থান করছে । শতদ্রু , বিপাশা ও ইরাবতী নদী তিনটি ধাওলাধর পর্বতকে বিভিন্ন স্থানে ছেদ করেছে । কাংড়া উপত্যকা ধাওলাধর পর্বতের দক্ষিণ পাদদেশে অবস্থিত । এটি অর্থনৈতিক কার্যকলাপে বিশেষ উন্নত এবং ঘন জনবসতিপূর্ণ । পিরপঞ্জলের মধ্য দিয়ে রোহটাং গিরিপথ ( ৪,৮০০ মিঃ ) উত্তরে লাহুল ও দক্ষিণে কুলু উপত্যকা দুটিকে যুক্ত করেছে । কুলু উপত্যকা আপেলের জন্য বিখ্যাত । ধাওলাধর পর্বতে উষ্ণ প্রস্রবণ আছে । ভবিষ্যতে এই অঞ্চল থেকে খনিজ তেল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে । হিমাচল বা পাঞ্জাব হিমালয়ের দক্ষিণ – পূর্বে উত্তরাখণ্ডের সীমানায় নাগটিব্বা ও মুসৌরী পর্বত দুটি অবস্থান করছে । ধাওলাধর ও পিরপঞ্জলের উত্তরে উচ্চ হিমালয় ( ৫,০০০–৬,০০০ মিঃ ) পর্বত অবস্থিত । এই পর্বতের মধ্য দিয়ে কাংলা , বড়চালা প্রভৃতি গিরিপথ গেছে একেবারে উত্তর – পূর্ব প্রান্তে জানসকর পর্বত স্পিটি ও কিনাউর উপত্যকাকে উত্তর পূর্বে অবস্থিত তিব্বত মালভূমি থেকে পৃথক করেছে । এই দুই পর্বতে বহু হিমবাহ দেখতে পাওয়া যায় । এই অঞ্চলের নদীগুলি সিন্ধু ও গঙ্গা উভয় নদী – উপত্যকাকেই জল সরবরাহ করে থাকে । নদীগুলির মধ্যে চন্দ্রভাগা , ইরাবতী , বিপাশা ও শতদ্রু নদী বিশেষ উল্লেখযােগ্য ।
  • কুমায়ুন হিমালয় বা উত্তরাখণ্ড হিমালয়ঃ হিমালয়ের এই অংশের দক্ষিণ থেকে উত্তরে যথাক্রমে শিবালিক , হিমাচল ও হিমাদ্রি এই তিনটি পর্বতশ্রেণীই উত্তর – পশ্চিম থেকে দক্ষিণ – পূর্বে বিস্তার লাভ করেছে । সর্বদক্ষিণে শিবালিক পর্বত ৭৫০ মিটার হইতে ১,২০০ মিটার উচ্চ । এর দক্ষিণ ঢাল খুব খাড়াই , কিন্তু উত্তর ঢাল ক্রমশঃ নীচু হয়ে নিম্ন – উপত্যকায় মিশেছে । এই উপত্যকাগুলিকে ‘ দুন ’ বলে । এদের মধ্যে দেরাদুন সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ( ৩৬ কিঃ মিঃ দীর্ঘ ও ২৫ কিঃ মিঃ প্রশস্ত ) এবং উন্নত । অন্যান্য উপত্যকা গুলির মধ্যে কোটরি , চৌখাম্বা , পাট্টি , কোটা বিশেষ উল্লেখযােগ্য ।দুন – উপত্যকাগুলির উত্তরে আছে হিমাচল পর্বতশ্রেণীর নাগটিব্বা ও মুসৌরী পর্বত । এটি ১,৫০০ মিটার থেকে ২,৭০০ মিটার উচ্চ এবং গড়ে প্রায় ৭৫ কিলােমিটার প্রশস্ত । এই পর্বতের পূর্বদিকে অনেকগুলি হ্রদ দেখতে পাওয়া যায় । এদের মধ্যে নৈনিতাল , ভীমতাল , নাউকুচিয়াতাল , সাততাল , পুনাতাল প্রভৃতি হ্রদ বিশেষ উল্লেখযােগ্য ।হিমাচল পর্বতশ্রেণীর উত্তরে হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণী অবস্থিত । এটি ৫০ কিলােমিটার প্রশস্ত এবং গড় উচ্চতা ৪,৮০০ মিটার থেকে ৬,০০০ মিটার । এই পর্বতশ্রেণীতেই নন্দাদেবী ( ৭,৮১৭ মিঃ ) , কামেট ৭,৭৫৬ মিঃ ) , বন্দরপুঞ্চ ( ৬,৩১৫ মিঃ ) , গঙ্গোত্রী ( ৬,৬১৪ মিঃ ) , কেদারনাথ ( ৬,৯৪০ মিঃ ) , চৌখাম্বা ( ৭,১৩৮ মিঃ ) , ত্রিশূল ( ৭,১২০ মিঃ ) , নন্দাকোট ( ৬,৮৬১ মিঃ ) প্রভৃতি তুষারাবৃত শৃঙ্গসমূহ অবস্থিত ।হিমালয়ের এই অঞ্চল থেকে বহু নদীর উৎপত্তি হয়েছে । এই নদীগুলিকে গঙ্গা , যমুনা ও কালি – এই তিনটি নদী – বিন্যাসে ভাগ করা যায় ।

উপরোক্ত অংশ নিয়ে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কোনো সাহায্য হলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে তাদের কেও সাহায্য করুন। প্রশ্নটি নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।