শিল্পস্থাপনের অনুকূল পরিবেশ গুলি কী ?

0
শিল্পস্থাপনের অনুকূল পরিবেশ বা কারণগুলি কী কী ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। তাই প্রশ্নটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পস্থাপনের অনুকূল পরিবেশ বা কারণগুলি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

শিল্পস্থাপনের অনুকূল পরিবেশ বা কারণগুলি কী কী ?

শিল্পস্থাপনের অনুকূল ভৌগােলিক পরিবেশ বা কারণগুলিকে দু’টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় যথা – প্রাকৃতিক পরিবেশ বা কারণ এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ বা কারণ । নিচে বিশদে এই দুটি আলোচনা করা হল –

প্রাকৃতিক পরিবেশ / কারণঃ

  1. কাঁচামালঃ কাঁচামালকে ব্যবহারের উপযােগী করে তােলাই হল শ্রমশিল্পের কাজ । তাই শিল্পস্থাপনের জন্য সবথেকে বেশি জরুরি হল কাঁচামাল অর্থাৎ কাঁচামালের সহজলভ্যতা । এই কাঁচামালের পরিমাণ ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য এই প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য।  যেমন – (i) ওজন হ্রাসকারী কাঁচামালঃ শিল্পপণ্য উৎপাদনের সময় ওজন হ্রাসকারী কাঁচামালের ওজন কমে যায় । যেমন – লৌহ ও ইস্পাত শিল্প , বক্সাইট , নরম কাঠ , আখ ইত্যাদি । এক্ষেত্রে সাধারণত শিল্পগুলি কঁচামাল উৎপাদক অঞ্চলের কাছেই গড়ে ওঠে । (ii) বিশুদ্ধ কাঁচামালঃ শিল্পপণ্য উৎপাদনের সময় বিশুদ্ধ কাঁচামালের ওজন কমে যায় না অর্থাৎ কাচামাল এবং শিল্পপণ্যের একই ওজন থাকে । যেমন – তুলাে , পাট , রেশম , পশম প্রভৃতি । তাই এই শিল্পগুলি কাঁচামাল উৎপাদক অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য পরিবেশ অনুকূল থাকলে দূরবর্তী অঞ্চলেও গড়ে ওঠে ।
  2. শক্তি সম্পদঃ যে কোনাে শিক্ষা গড়ে তুলতে গেলে প্রয়ােজন শক্তির আধুনিক যুগে শক্তি সম্পদ বলতে বিদ্যুৎকেই বােঝানাে হয় । এই বিদ্যুৎ তৈরির প্রধান উপাদান হল  কয়লা , খনিজ তেল ও জল । তাই এদের মধ্যে যেটি সহজলভ্য , সেই উৎসের কাছাকাছি শিল্প গড়ে ওঠে । যেমন , ভারতের পূর্বাঞ্চলের কয়লাক্ষেত্রে শিল্পের এক বৃহৎ কেন্দ্রীভবন ঘটেছে ।
  3. জলবায়ুঃ শিল্প স্থাপনে জলবায়ু প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে । যেমন – কৃষিভিত্তিক কাচামাল ব্যবহারকারী শিল্পগুলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জলবায়ু কী ধরনের ফসল উৎপাদনের উপযােগী , তা নির্দিষ্ট শিল্পস্থাপনকে প্রভাবিত করে , যথা – ইক্ষু উৎপাদনের উপযুক্ত জলবায়ুতে ইক্ষু উৎপাদন ও চিনি শিল্প গড়ে ওঠে ; উদাহরণ – উত্তর ভারতের চিনি শিল্প । এছাড়া , জলবায়ুর প্রভাব কিছু কিছু শিল্পের বিস্তার লাভের সহায়ক , যেমন – আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য মহারাষ্ট্রে বস্ত্রবয়ন শিল্প উন্নতিলাভ করেছে । পরােক্ষভাবে , জলবায়ু শ্রমিকের শক্তি ও কর্মদক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করে । উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে শ্রমিকের কর্মশক্তি কমে যায় বলে এই অঞ্চলে শিল্পের প্রসার হয়নি । আবার নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলের পরিশ্রমের উপযােগী মৃদু শীতল জলবায়ু শিল্পোন্নতির একটি অন্যতম কারণ । অত্যধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে পরিবেশ স্যাতসেঁতে ও অস্বাস্থ্যকর বলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বিশেষ কোনাে শিল্প গড়ে ওঠেনি । অবশ্য বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে জলবায়ুর প্রভাব অনেকটা কমানাে গেছে ।
  4. জল সম্পদঃ সরকম শিল্পস্থাপনের জন্যই জলের প্রয়ােজন হয় । তাই বেশিরভাগ শিল্পাঞ্চলই কোনাে নদী , হ্রদ বা সাগর উপসাগরের তীরে গড়ে উঠেছে । তবে এমন কয়েকটি শিল্প আছে যাতে জলের প্রয়ােজন খুবই বেশি; যেমন লৌহ ও ইস্পাত শিল্প , রাসায়নিক শিল্প , কাগজ শিল্প ইত্যাদি । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় , দামােদর নদের তীরে দুর্গাপুর ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে । তবে শিল্পের নিজস্ব ব্যবহার ছাড়াও শিল্পকে ভিত্তি করে যে জনবসতি গড়ে ওঠে তার জন্যও পর্যাপ্ত সুলভ জলের প্রয়ােজন । তাই জল যেখানে দুষ্প্রাপ্য এমন অঞ্চলে শিল্প গড়ে ওঠা কষ্টসাধ্য । 

অর্থনৈতিক পরিবেশ / কারণঃ

  1. শ্রমিকঃ আধুনিক শিল্পস্থাপনে শ্রমিকের ভূমিকা অন্যতম । সুলভ এবং দক্ষ শ্রমিকের সরবরাহ শিল্পদ্রব্যের মান এবং মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে । তাই জাপান ও চীনে শ্রমিক সুলভ এবং নিপুণ বলে শিল্পস্থাপন সহজ হয়েছে । অপরদিকে শ্রমিকের অভাব অস্ট্রেলিয়ায় শিল্পোন্নতি হতে বাধা সৃষ্টি করেছে । তবে বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে শিল্পস্থাপনে শ্রমিকের প্রভাব কিছুটা কমে আসছে ।
  2. পরিবহনঃ সুবরকম অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকলে শিল্পস্থাপন উন্নতি লাভ করে না । পরিবহন কাঁচামাল ও বাজারের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করে । তাই পৃথিবীর সব উল্লেখযােগ্য শিল্পাঞ্চলেই রেলপথ , সড়কপথ , জলপথ চারদিকে জালের মতাে ছড়িয়ে রয়েছে । অপরদিকে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় অন্যান্য অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বুজিলে শিল্পোন্নতি ঘটেনি ।
  3. মূলধনঃ শিল্পস্থাপনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল মূলধনের প্রাচুর্য । শিল্পের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল , শক্তি , স্থান , শ্রমিক , পরিবহন প্রভৃতি যােগানে বিশেষত প্রাথমিক অবস্থায় প্রচুর মূলধনের প্রয়ােজন হয় । সুতরাং মূলধনের সহজলভ্যতা শিল্পস্থাপনের সহায়ক । যেমন – ভারতের মহারাষ্ট্রে ও গুজরাটে বস্ত্রশিল্প কেন্দ্রীভূত হওয়ার একটি প্রধান কারণ এই অঞ্চলের ধনী ভাটিয়া , পার্শি ও গুজরাটি ব্যবসায়ীরা তাদের প্রচুর মূলধন এই শিল্পে বিনিয়ােগ করেছেন ।
  4. চাহিদাঃ শ্রমশিল্পজাত পণ্যের চাহিদার উপর শিল্পস্থাপন নির্ভর করে । তাই বর্তমানে ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত দ্রব্যের পৃথিবী জুড়ে বিপুল চাহিদা এই শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছে । অপরদিকে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এই শিল্পের ক্রম অবনতি ঘটছে ।
  5. সরকারি নীতি বা রাজনৈতিক অবস্থাঃ শিল্পস্থাপনে উৎসাহ দান , বিকেন্দ্রীকরণের পরিকল্পিত প্রয়াস , শুল্ক ছাড় নীতি , শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাের উন্নতি , আমদানি , রপ্তানির সুবিধা ইত্যাদি শিল্পস্থাপনকে প্রভাবিত করে । অন্যদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেশে শিল্পস্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। প্রশ্নের বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য অথবা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।