আদর্শ নদী কি?

0
আদর্শ নদী কি?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। আদর্শ নদী কি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

আদর্শ নদী কি?

সংজ্ঞাঃ

যে নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত গতিপ্রবাহে তিনটি অবস্থাই ( উচ্চ প্রবাহ, মধ্যপ্রবাহ ও নিম্নপ্রবাহ) সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়, তাকে আদর্শ নদী (Ideal River) বলে । অন্যভাবে বলা যায়, যে নদী তার ঢালকে ক্ষয়চক্রের দ্বারা সমুদ্রতলের ঢালের সাথে সমতা রেখে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে পর্যায়িত ঢালে পরিনত করে, তাকে আদর্শ নদী (Ideal River) বলে ।

উদাঃ

প্রাকৃতিক দিক দিয়ে ভারতের গঙ্গানদী একটি আদর্শ নদী, যেটি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা প্রায় ২০৭১ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে তার তিনটি প্রবাহই যথা

  • ঊর্দ্ধপ্রবাহ– গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত,
  • মধ্যপ্রবাহ– হরিদ্বার থেকে ধুলিয়ান (মতান্তরে রাজমহল) পর্যন্ত
  • নিম্নপ্রবাহ– ধুলিয়ান (মতান্তরে রাজমহল) থেকে মোহনা পর্যন্ত সম্পূর্ণ করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়ে সমাপ্ত হয়েছে ।

বৈশিষ্ট্যঃ 

আদর্শ নদী – র বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. একটি আদর্শ নদী সর্বদা তার উৎসস্থলকে সমুদ্রতলের ঢালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে ।
  2. একটি আদর্শ নদীর প্রাকৃতিকভাবে উচ্চপ্রবাহ, মধ্যপ্রবাহ ও নিম্নপ্রবাহ – এই তিনপ্রকার প্রবাহই বিদ্যমান ।
  3. আদর্শ নদী তার উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত ঢালকে মৃদুঢালে পরিনত করে ।

আদর্শ নদীর তিনটি প্রবাহঃ 

একটি আদর্শ নদীর (Ideal River) তিনটি প্রবাহ লক্ষ্য করা যায় । যথা – উর্দ্ধপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহ (Upper Course Or, Mountain Course), মধ্যপ্রবাহ বা সমভূমি প্রবাহ (Middle Course Or, Plain Course) এবং নিম্নপ্রবাহ বা ব-দ্বীপ প্রবাহ (Lower Course Or, Deltaic Course) । নিম্নে এই তিনটি প্রবাহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

উর্দ্ধপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহ (Upper Course Or, Mountain Course):

সংজ্ঞাঃ

উৎসস্থল থেকে সৃষ্টি হওয়ার পর নদীর যে প্রবাহ পার্বত্য অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়,তাকে উর্দ্ধপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহ (Upper Course Or, Mountain Course) বলে ।

উদাঃ

গঙ্গোত্রী (গোমুখ) থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত প্রায় ৩২০ কিলোমিটার গঙ্গার উর্দ্ধপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহ ।

বৈশিষ্ট্যঃ

উর্দ্ধপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ভূমিভাগ খুব উচু-নীচু হয়; সেইজন্য নদী উচ্চপ্রবাহে বা পার্বত্য প্রবাহে খাড়া পর্বতগাত্র বেয়ে দুরন্ত গতিতে (প্রায় ২০-৩৫ কিলোমিটার / ঘন্টা) নিম্নদিকে প্রবাহিত হয় ।
  2. এই প্রবাহে প্রবল স্রোতের আঘাতে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে শিলাখন্ড ভেঙ্গে স্রোতের সাথে নিচের দিকে গড়াতে গড়াতে অগ্রসর হতে থাকে ।
  3. এই প্রবাহে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশী হয় ।
  4. উর্দ্ধপ্রবাহে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয়সাধন ও বহন হলেও অনেক সময় নদীঢাল হঠাৎ কমে গেলে সঞ্চয়কার্যও দেখা যায় ।

সৃষ্ট ভূমিরূপঃ

উর্দ্ধপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হলো – ‘V’ – আকৃতির উপত্যকা (‘V’-Shaped Valley) ও গিরিখাত (Gorge), ‘I’ – আকৃতির উপত্যকা (‘I’-Shaped Valley) ও ক্যানিয়ন (Canyon), জলপ্রপাত (Waterfall), মন্থকূপ (Pot-hole), অন্তবর্দ্ধ শৈলশিরা (Interlocking Spur), কর্তিত শৈলশিরা (Trunscated Spur) প্রভৃতি।

মধ্যপ্রবাহ বা সমভূমি প্রবাহ (Middle Course Or, Plain Course):

সংজ্ঞাঃ

উচ্চপ্রবাহের পর নদী পার্বত্য অঞ্চল পরিত্যাগ করে সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে, একে নদীর মধ্যপ্রবাহ বা সমভূমি প্রবাহ (Middle Course Or, Plain Course) বলে ।

উদাঃ

হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল মতান্তরে পশ্চিমবঙ্গের ধূলিয়ান পর্যন্ত গঙ্গার মধ্য প্রবাহ বা সমভূমি প্রবাহ ।

বৈশিষ্ট্যঃ

মধ্যপ্রবাহ বা সমভূমি প্রবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ভূমিভাগের ঢাল অনেক কম হওয়ায় নদী উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহ অপেক্ষা অনেক ধীরে প্রবাহিত হয় ।
  2. এই প্রবাহে পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাহিত শিলাখন্ডগুলি নদীর শক্তি কমে যাওয়ায় এই প্রবাহে আর বহন করতে পারে না; ফলে এই শিলাখন্ডগুলি নদীর উভয়তীরে সঞ্চিত হয় । অবশ্য হাল্কা কর্দম কণা ও বালি ভাসমান অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে ।
  3. এই প্রবাহে নদীর পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় উভয়ই চলতে থাকে ।
  4. এই প্রবাহে নদীর ক্ষয়সাধন ও বহন অপেক্ষা অবক্ষেপণ কার্য প্রাধান্য পায় ।
  5. এই প্রবাহে নদীতে জলের পরিমান বৃদ্ধি পায় ।
  6. এই প্রবাহে নদী ক্রমশঃ ধীর গতিসম্পন্ন হয়ে আঁকাবাঁকা পথে চলতে থাকে ।
  7. বহু উপনদী এই প্রবাহে প্রধান নদীর সাথে মিলিত হয় ।
  8. এই প্রবাহে নদী সাধারনত নাব্য হয় ।

সৃষ্ট ভূমিরূপঃ

মধ্যপ্রবাহ বা সমভূমি প্রবাহে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হলো – পলল শংকু (Alluvial Cone) ও পলল ব্যজনী (Alluvial Fan), নদীচড়া (Sand Bank), নদীবাঁক (Meander), নদীমঞ্চ (River Terraces) প্রভৃতি।

নিম্নপ্রবাহ বা ব-দ্বীপ প্রবাহ (Lower Course Or, Deltaic Courses):

সংজ্ঞাঃ

মধ্যপ্রবাহের পর থেকে মোহনা তথা নদীর সমাপ্তিস্থল পর্যন্ত নদীর শেষ বা অন্তিম প্রবাহকে নিম্নপ্রবাহ বা ব-দ্বীপ প্রবাহ (Lower Course Or, Deltaic Course) বলে ।

উদাঃ

বিহারের রাজমহল মতান্তরে পশ্চিমবঙ্গের ধূলিয়ান থেকে বঙ্গোপসাগরে মোহনা পর্যন্ত প্রবাহ গঙ্গার নিম্নপ্রবাহ নামে পরিচিত ।

বৈশিষ্ট্যঃ

নিম্নপ্রবাহ বা ব-দ্বীপ প্রবাহ -এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ভূমিভাগের ঢাল খুবই কম থাকায় নদী উচ্চপ্রবাহ বা মধ্যপ্রবাহ অপেক্ষা অনেক ধীরে প্রবাহিত হয় ।
  2. এই প্রবাহে পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাহিত শিলাখন্ডগুলি নদীর শক্তি কমে যাওয়ায় এই প্রবাহে আর বহন করতে পারে না; ফলে এই শিলাখন্ডগুলি নদীর উভয়তীরে সঞ্চিত হয় । অবশ্য হালকা কর্দম কণা ও বালি ভাসমান অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে ।
  3. এই প্রবাহে নদীর নিম্নক্ষয় একেবারেই কমে যায় এবং সামান্য পরিমানে পার্শ্বক্ষয় চলতে থাকে ।
  4. এই প্রবাহে নদীর ক্ষয়কার্যবহনকার্য অপেক্ষা অবক্ষেপণকার্য সর্বাধিক প্রাধান্য পায় এবং নতুন নতুন ভূমিভাগ সৃষ্টি হতে থাকে
  5. এই প্রবাহে নদী উপত্যকা খুব চওড়া ও অগভীর হয় ।

সৃষ্ট ভূমিরূপঃ

নিম্নপ্রবাহ বা ব-দ্বীপ প্রবাহে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হলো – প্লাবন ভূমি (Flood Plain) ও স্বাভাবিক বাঁধ বা লেভি (Natural Leeve), ব-দ্বীপ (Delta), খাঁড়ি (Estuary / Firth) প্রভৃতি।

উপরের বিষয়টি থেকে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং বিষয়টি আপনার পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।