উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো ?

0
উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমার ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রশ্নটি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস এই প্রশ্নটি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

Advertisement

উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো ?

ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে যে অদৃশ্য গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাকে বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) বলে । বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীকে চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে । একে আবহমণ্ডলও বলা হয় । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না, শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি । পৃথিবীএটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণের বলে পৃথিবীর গায়ে লেগে থাকে এবং পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে আবর্তন করতে থাকে । বায়ুমণ্ডল কতকগুলি বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উর্দ্ধে এটি ক্রমশঃ হালকা হয়ে গেছে । বায়ুমণ্ডলের শতকরা ৯৭ ভাগ পদার্থই ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৯ কিলােমিটারের ( ১৮ মাইল ) মধ্যে অবস্থান করলেও বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বসীমা আরও সুদূর প্রসারিত । বৈজ্ঞানিকগণ বায়ুমণ্ডলের এই সীমানাকে ১০,০০০ কিলােমিটার বা ৬,০০০ মাইল পর্যন্ত ধরে থাকেন , যার আরও পরে আছে মহাশূন্য । আবহবিদ্যায় নীচের ১০০ কিঃ মিঃ বা ৬০ মাইল পর্যন্ত বায়ুস্তর সম্বন্ধে পর্যালােচনা করা হয় । বাকী উপরের অংশ এরোনমি ( Aeronomy ) বিদ্যার অন্তভুক্ত । উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস মূলত ২ টি স্তরে বিভক্ত । যথা – সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere)বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) । নিচে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল

সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere):

বুৎপত্তিগত অর্থঃ

গ্রীক শব্দ “Homo” এর অর্থ ‘সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।

সংজ্ঞাঃ 

ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসায়নিক গঠন বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) বলা হয় ।

বিস্তারঃ

সমমন্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে মোটামুটি ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থিত ।

গঠনঃ

সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) প্রধানত – বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ [যথা -নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ (১.১ %)], জলীয় বাষ্প এবং জৈব ও অজৈব কণিকা বা অ্যারোসল (Aerosol) যেমন – অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত ।

স্তরসমূহঃ

সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) মূলত তিনটি উপস্তরে বিভক্ত । যথা

  • ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere): ভু-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere) বলে ।
  • স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere): ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে ১৮ কিমি থেকে ৫০ কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) বলে ।
  • মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere): স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে ৫০ কিমি থেকে ৮০ কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের তৃতীয় স্তরকে মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere) বলে ।

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere):

বুৎপত্তিগত অর্থঃ

গ্রীক শব্দ “Hetoro” এর অর্থ ‘বিষমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।

সংজ্ঞাঃ

বায়ুমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবস্থিত বায়ুস্তরকে বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) বলা হয় ।

বিস্তারঃ

বিষমমন্ডলের বিস্তার মেসোস্ফিয়ারের উপরে মোটামুটি ৮০ কিমি থেকে প্রায় ১০০০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত ।

গঠনঃ

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) প্রধানত বিভিন্ন গ্যাসের (যথা – নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হিলিয়াম, হাইড্রোজেন প্রভৃতি) আণবিক মিশ্রণে গঠিত ।

স্তরসমূহঃ

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) মূলত চারটি উপস্তরে বিভক্ত । যথা-

  • আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Molecular Nitrogen Level): মোটামুটি ৯০ কিমি থেকে প্রায় ২০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরকে আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Molecular Nitrogen Level) বলে ।
  • পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Atomic oxygen level): আণবিক নাইট্রোজেন স্তরের উপরে প্রায় ১১০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Atomic oxygen level) বলে ।
  • হিলিয়াম স্তর (Helium level): পারমাণবিক অক্সিজেন স্তরের উপরে প্রায় ৩৫০০ কিমি পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের তৃতীয় স্তরকে হিলিয়াম স্তর (Helium level) বলে।
  • হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Level): হিলিয়াম স্তরের উপরে বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ উর্দ্ধসীমা ১০০০০ কিমি পর্যন্ত অবস্থিত স্তরটিকে হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Level) বলে ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করতে ভুলবেন না। প্রশ্নটি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।