হিমালয়ের উৎপত্তি সম্পর্কে লেখ?

0
হিমালয়ের উৎপত্তি সম্পর্কে লেখ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই বিষয়টি ভালো ভাবে অধ্যায়ন করলে খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। হিমালয়ের উৎপত্তি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

Advertisement

হিমালয়ের উৎপত্তি সম্পর্কে লেখ?

হিমালয় পর্বতশ্রেণী পৃথিবীর নবীনতম পর্বতশ্রেণীগুলির অন্যতম । এটি টার্সিয়ারী যুগের একটি ভঙ্গিল পর্বত । বর্তমানে যে অঞ্চলব্যাপী হিমালয় পর্বতমালা অবস্থিত , দশ কোটি বৎসর পূর্বে সেই অঞ্চলে একটি বিশাল সমুদ্র ছিল , যার নাম ছিল টেথিস (Tethys) । এর এক অংশ ভূমধ্যসাগররূপে আজও অবস্থান করছে । টেথিস সমুদ্রের উত্তরে ছিল কতকগুলি অতি প্রাচীন ভূখণ্ড ও পর্বত, যার নাম একত্রে ছিল অ্যাঙ্গারাল্যাণ্ড (Angaraland)। দক্ষিণেও অনুরূপ কতকগুলি প্রাচীন ভূখণ্ড ছিল , যাদের একত্রে গন্ডোয়ানাল্যান্ড (Gondwanaland) বলা হত । টেথিস সাগরে দীর্ঘায়ত অবনমিত স্থান বা মহীখাতের (জিওসিনক্লাইনের) উভয় পার্শ্বে অবস্থিত এই দুই প্রাচীন ভূখণ্ড থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত দ্রব্যসমূহ পরিবাহিত হয়ে মহীখাত বা জিওসিনাইনটিকে ক্রমশঃ ভরাট করতে থাকে । পরে ভূ – আন্দোলনে গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ড ও অ্যাঙ্গারাল্যাণ্ড পরস্পরের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়ার ফলে এই দুই প্রাচীন ভূখণ্ডের চাপে টেথিস সমুদ্র থেকে হিমালয়ের উৎপত্তি হয় ।

হিমালয় কিন্তু একটি ভূ – আন্দোলনেই গঠিত হয়নি । আজ থেকে প্রায় ৭ কোটি বৎসর পূর্বে টার্সিয়ারী যুগে হিমালয়ের সূচনা হয় । হিমালয় তিনটি ভূ আন্দোলনে গঠিত হয় । সর্বপ্রথম ভূ – আন্দোলনটি হয় ৪ কোটি বৎসর পূর্বে অলিগােসিন উপযুগে , যখন প্রবল ভূ – আন্দোলনে টেথিস অবতলে সঞ্চিত পাললিক শিলা ভাঁজ হয়ে উপরে উঠে পড়ে এবং তার সঙ্গে দাক্ষিণাত্য মালভূমির প্রাচীন রূপান্তরিত শিলা ও কঠিন গ্রানাইট শিলা , কুঞ্চিত পাললিক শিলার ফাটলের মধ্য দিয়ে উপরে উঠে এসে হিমগিরি বা হিমাদ্রি এবং টেথিস হিমালয়ের জন্ম দেয় । হিমগিরির উচ্চতা হিমালয় জন্মের পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকায় এটি হিমালয়ের সর্বাপেক্ষা উচ্চ পর্বতরূপে অবস্থান করছে । হিমগিরি জন্মের প্রায় ১৪ কোটি বৎসর পরে , অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ২ কোটি বৎসর পূর্বে মধ্য মাইওসিন উপযুগে টেথিস অবতলে সঞ্চিত পলিমাটি দ্বিতীয় পর্যায়ে উপরে উঠে হিমাচল বা অবহিমালয়ের সৃষ্টি করে । হিমগিরি ও হিমাচলের ক্ষয়িত অংশ কালক্রমে হিমালয়ের পাদদেশে সঞ্চিত হয় এবং তাহা মাত্র ৭০ লক্ষ বৎসর পূর্বে মধ্য প্লাইস্টোসিন উপযুগে শিবালিক পাহাড়ে পরিণত হয় । দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভূ – আন্দোলন দুটির শক্তি অধিক থাকায় শিলাস্তরে যথেষ্ট ভাজ , রিকাম্বেণ্ট ভাজ , চ্যুতি , সংঘট্ট চ্যুতি , নাপ প্রভৃতির সৃষ্টি হয়েছে । কখনও কখনও চাপ এত বেশী হয়েছে যে , নিম্নে অবস্থিত প্রাচীন শিলাস্তর উপরে উঠে উপরের নবীন শিলাস্তরকে নিম্নে প্রােথিত করেছে । হিমালয়ের উত্তর পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বতের নিকট এবং উত্তর – পূর্বে সাদিয়া পার্বত্য অঞ্চলে দুইটি বাঁক দেখতে পাওয়া যায় । ভূ – বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে , দাক্ষিণাত্যের কঠিন শিলাখণ্ড হিমালয়ের নরম শিলাস্তরের মধ্যে চাপ দেওয়ায় এই বাঁক দুইটির সৃষ্টি হয়েছে । হিমালয়ের শিলাস্তরে বহু জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ছাপ (জীবাশ্ম) দেখতে পাওয়া যায় । যে কারণে অনুমান করা হয় যে , হিমালয় পর্বত এক সময় সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত ছিল । হিমালয় পর্বত কিন্তু এখনও খুব ধীরে ধীরে উপরে উঠছে , যা হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্পের একটি প্রধান কারণ ।

উপরোক্ত অংশ নিয়ে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কোনো সাহায্য হলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে তাদের কেও সাহায্য করুন। প্রশ্নটি নিজের কাছে সংরক্ষিত করার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।