সুয়েজ খাল সম্পর্কে লেখো ?

0
সুয়েজ খাল সম্পর্কে লেখো ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। তাই প্রশ্নটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

সুয়েজ খাল সম্পর্কে লেখো ?

পরিচিতিঃ

সুয়েজ খাল পৃথিবীর দীর্ঘতম কৃত্রিম সামুদ্রিক খাল, যা মিশরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত । এই খালটি উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও দক্ষিনে লোহিত সাগরকে যুক্ত করেছে । ২০১০ সালে গৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯০ কিমি, প্রস্থ প্রায় ২০৫ মিটার এবং গভীরতা প্রায় ২৪ মিটার । এই খালের প্রবেশপথে ভূমধ্যসাগরের তীরে পোর্ট সৈয়দ এবং শেষপ্রান্তে লোহিত সাগরের তীরে পোর্ট সুয়েজ অবস্থিত । এটি একটি একলেন বিশিষ্ট খাল, যাতে জলতল নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো লকগেট নেই । সমুদ্রের জল এই খালের ভিতর দিয়ে অবাধে প্রবাহিত হয় । ফরাসি প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দে লেসেপ্স – এর তত্ত্বাবধানে ১৮৫৯ সালে এই খালের নির্মাণকার্য শুরু হয়, যা ১৮৬৯ সালে সম্পন্ন হওয়ার পর নৌ-চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় । এই খালের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা মিশরের সুয়েজ ক্যানাল অথরিটির উপরে অর্পিত ।

নির্মাণের উদ্দেশ্যঃ

সুদূর অতীতে উত্তরে ইউরোপ ও দক্ষিণে এশিয়া মহাদেশের বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগে জলপথে পরিবহণ করতে গেলে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে তা সম্পন্ন করতে হত । এর ফলে একদিকে যে শুধু পরিবহণ খরচ ও সময়ই বহুলাংশে বৃদ্ধি পেত তা নয়, সেইসাথে জাহাজগুলিকে উত্তমাশা অন্তরীপসংশ্লিষ্ট দূর্যোগপূর্ণ বিপজ্জনক আবহাওয়ার মধ্য দিয়েও চলাচল করতে হত । কখনও কখনও পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে মিশরের স্থলপথ অতিক্রম করে , ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগরে এবং লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে অপেক্ষমাণ জাহাজে পারাপার করা হত । যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর তা নৌ-চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ায় সরাসরি উত্তরে ইউরোপের সাথে দক্ষিণে এশিয়া মহাদেশের নৌ-যোগাযোগ অনেক সহজতর হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি নৌ-যোগাযোগ স্থাপন করে এই খালটি কলকাতা ও লন্ডনের মধ্যে প্রায় ৫৬০০ কিমি, মুম্বই ও লন্ডনের মধ্যে প্রায় ৭০০০ কিমি এবং সিঙ্গাপুর ও লন্ডনের মধ্যে প্রায় ৫৩০০ কিমি দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে । 

সুবিধা / গুরুত্বঃ

সুয়েজ খাল – এর সুবিধা / গুরুত্বগুলি হল নিম্নরূপ

  1. এই খালটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে ।
  2. সুয়েজ খালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ২০% পণ্যদ্রব্য পরিবাহিত হয়, যে কারণে এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম ।
  3. প্রাচ্যের দেশগুলি থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার কৃষিদ্রব্য এবং খনিজ দ্রব্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে বিভিন্ন প্রকার শিল্পজাত দ্রব্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় । শুধুমাত্র পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেই নয়, যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ ।
  4. সুয়েজ খালের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া ও রোমানিয়া অঞ্চলের খনিজ তেল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন করা হয় ।
  5. পশ্চিম ইউরোপের কয়লা ও মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল এই খালপথে চলাচলকারী জাহাজগুলির জ্বালানি হিসাবে সরবরাহ করা হয় ।
  6. নিকটবর্তী অঞ্চল জনবহুল ও উন্নত এবং বন্দরের সংখ্যাও যথেষ্ট বেশী, যা নৌ-চলাচল ও মেরামতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য সহায়ক ।

অসুবিধাঃ

সুয়েজ খাল – এর অসুবিধাগুলি হল নিম্নরূপ

  1. এই খালপথে শুল্কের হার অত্যন্ত বেশী ।
  2. সংকীর্ণ হওয়ায় বড় বড় জাহাজ চলাচলে অসুবিধা হয় ।।
  3. মাত্র ১৬৬ কিমি পথ অতিক্রম করতে প্রায় ১০-১২ ঘন্টা সময় লেগে যায় ।
  4. এই অঞ্চলের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য এই খালপথে জাহাজ চলাচল প্রায়শই অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। প্রশ্নের বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য অথবা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।