ভারতের জলসেচ ব্যবস্থা ?

0
ভারতের জলসেচ ব্যবস্থার ক্রমবিবর্তন লেখ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা শিখবো ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী। ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি অধ্যায়ন করলে তারা সহজেই পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। ভারতের জলসেচ ব্যাবস্থার ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

Advertisement

ভারতের জলসেচ ব্যবস্থার ক্রমবিবর্তন লেখ?

ভারতের জলসেচ ব্যবস্থার ক্রমবিবর্তন তথা ভারতীয় কৃষির সাফল্যের রূপরেখা নির্ভর করে আসছে উর্বর জমি এবং কৃষির প্রয়ােজনীয় জল সরবরাহের উপর । ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বত্র সমান নয় । এক অঞ্চল থেকে অপর অঞ্চলের মধ্যে বৃষ্টিপাতের যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । ভারতের মােট বৃষ্টিপাতের শতকরা ৭৫ ভাগ গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমনে ঘটে থাকে । তাই শীতকালে ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল প্রায় শুষ্ক থাকে । এই দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমীবায়ুর আগমন বা প্রত্যাগমনও প্রতি বৎসর ঠিক সময়ে হয় না । কোন বৎসর এর আগমন দেরিতে ঘটে , আবার কোন বৎসর তা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এসে পড়ে । আবার কোন বৎসর মৌসুমীর আগমন সময়মত হলেও মাঝখানে কিছুদিন বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায় এবং মৌসুমী বিলম্বে প্রত্যাগমন করে । ফলে কোন বৎসর অতিবৃষ্টি ও বন্যা , আবার কোন বৎসর অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয় । কখনও কখনও একই সঙ্গে দেশের এক অংশে বন্যা এবং অপর অংশে খরার প্রাদুর্ভাব দেখতে পাওয়া যায় । যে সকল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যত কম , সেই সকল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তাও তত বেশী । সুতরাং ভারতের মত কৃষিপ্রধান দেশ কৃষিকার্যের জন্য কেবল মৌসুমী বায়ুর অনিশ্চিত বৃষ্টিপাতের উপরই নির্ভর করে থাকতে পারে না । এই কারণে ভারতে কৃষিকার্যের সাফল্যের জন্য জলসেচের একান্ত প্রয়ােজন ।

ভারতে কৃষির প্রয়ােজনে জলসেচের ব্যবস্থা বহু প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে । এমনকি প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার যুগেও সিন্ধু উপত্যকায় জলসেচের দ্বারা ফসল উৎপন্ন হত । দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে কাবেরী নদীর উপর গ্র্যাণ্ড অ্যানিকাট বাঁধ দ্বিতীয় শতাব্দীতে তৈরী হয় । মুঘল আমলে পঞ্চদশ শতাব্দীতে পশ্চিম যমুনা খাল খনন করা হয়েছিল এবং যােড়শ শতাব্দীতে তুঙ্গভদ্রার খালগুলি খনন করা হয় । ইংরেজ শাসনকালেও বহু খাল খনন করা হয় । এর মধ্যে গােদাবরী – কৃষ্ণা বদ্বীপ খাল , মেত্তুর সেচ প্রকল্প , ইডেন খাল প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযােগ্য ।

স্বাধীনতালাভের পর দেশের খাদ্য সংকট সমাধানের জন্য সরকার সেচ ব্যবস্থার দ্রুত প্রসারের প্রয়ােজনীয়তার বিষয় বিশদভাবে উপলব্ধি করেন । এই কারণে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার শুরু থেকেই দেশে বিভিন্ন বহুমুখী নদী পরিকল্পনা ও সেচ প্রকল্প গৃহীত ও রূপায়িত হয়েছে । এই সকল পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে কষিক্ষেত্রে জলসেচের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে । বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রের মােট আয়তনের ২১% জমিতে জলসেচ করা হয় । তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় । এই জলসেচ বৃহৎ , মাঝারি ও ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে হয়ে থাকে । বিভিন্ন পরিকল্পনাকালে ভারতে মােট ১,১২৭ টি সেচ প্রকল্প গৃহীত হয় । স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতে সেচযুক্ত কৃমিজমির পরিমাণ ছিল প্রায় ২.২৬ কোটি হেক্টর । ১৯৮৪-৮৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত এই জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬.০৫ কোটি হেক্টরে দাড়িয়েছে । এর মধ্যে বৃহৎ ও মাঝারি সেচ প্রকল্পে ২.৫৩ কোটি হেক্টর এবং ক্ষুদ্র সেচপ্রকল্পে ৩.৫২ কোটি হেক্টর জমিতে সেচকার্য হয় । 

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে , ভারতের নদীগুলিতে জল সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১,৬৭,২৫১ কোটি ঘন মিটার । এর মধ্যে ৬৬,৬০০ কোটি ঘন মিটার জল কাজে লাগান যেতে পারে । কিন্তু এখন পর্যন্ত এই জল সম্পদের মাত্র এক তৃতীয়াংশই কাজে লাগান সম্ভব হয়েছে । সুতরাং কৃষিক্ষেত্রের উন্নতিকল্পে ভারতে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি করার যথেষ্ট অবকাশ আছে ।

উপরোক্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো বিস্ময় থাকলে নীচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কাছে সাহায্য দায়ক মনে হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করে তাদের কেও সাহায্য করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।