আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। হিমবাহ কি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হিমবাহ কি ?
বুৎপত্তিগত অর্থঃ
ল্যাটিন শব্দ ‘Glacies’ ও ফরাসী শব্দ ‘Glace’ শব্দের অর্থ ‘বরফ’ যা থেকে ‘Glacier’ বা ‘হিমবাহ’ শব্দটি এসেছে ।
সংজ্ঞাঃ
হিমরেখার উপরে থাকে তুষারক্ষেত্র । সেখানে যে তুষারপাত হয় তা প্রথম অবস্থায় আলগা আলগা হয়ে পড়ে থাকে । ফরাসি ভাষায় একে নেভে (Neve) বলে । এই তুষারকণা ক্রমশ পরস্পরের সঙ্গে মিশে বরফের স্তরে (Ice Sheet) এ পরিণত হয় । ক্রমশ তা আরও জমাট বেঁধে ও আয়তনে বড় হয়ে বরফের স্তূপের আকার ধারণ করে । তারপর উপরের চাপ ও বরফের নিজস্ব উষ্ণতায় নীচের কিছু বরফ গলে গেলে সেই বরফের স্তূপ পর্বতের ঢালে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করে । এই চলমান বরফের স্তূপকে হিমবাহ (Glacier) বলে ।
উদাহরণঃ
মেরুপ্রদেশের বাহিরে পৃথিবীর প্রায় ৫০,০০০ বর্গকিলােমিটার অঞ্চল হিমবাহ দ্বারা আবৃত আছে । এর মধ্যে ভারতের অংশ উল্লেখযোগ্য । ভারতের অধিকাংশ হিমবাহের দৈর্ঘ্য ৩ হইতে ৬ কিলােমিটার । কিন্তু কতকগুলি হিমবাহ ৩০ কিঃ মিঃ বা তারও অধিক দীর্ঘ । এদের মধ্যে কুমায়ুনে মিলাম ও গঙ্গোত্রী ( ৩৯ কিঃ মিঃ ) হিমবাহ এবং সিকিমে কাঞ্চনজঙ্ঘার জেমু ( ২৬ কিঃ মিঃ ) হিমবাহ বিশেষ উল্লেখযােগ্য । ভারতের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হিমবাহ কারাকোরাম পর্বতের দক্ষিণ ঢালে দেখতে পাওয়া যায় । এর মধ্যে সিন্ধু অববাহিকায় অবস্থিত হিপার ও বাতুরা হিমবাহ ৫০-৬০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ । সিন্ধুর উপনদী শিগার অববাহিকায় অবস্থিত বিয়াফো এবং বলটারো ( ৬০ কিঃ মিঃ ) পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ হিমবাহ ।
বৈশিষ্ট্যঃ
হিমবাহ – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ
- হিমবাহের গভীরতাঃ এটি অন্ততপক্ষে ১০০-১৫০ ফুট গভীর হয় ।
- হিমবাহের গতিবেগঃ হিমবাহকে বরফের নদী বলা হলেও নদীর ন্যায় হিমবাহের গতি অত দ্রুত নয় । আল্পসের হিমবাহ প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৫৫ সেন্টিমিটার বা ২২ ইঞ্চি অগ্রসর হয় । হিমালয়ের হিমবাহ গড়ে ২৫ হতে ৭৫ সেঃ মিঃ বা ১ হইতে ৩ ইঞ্চির মত নামে । হিমবাহের এই গতিবেগ বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন প্রকার হয় । প্রবহমান হিমবাহের দুই পার্শ্ব অপেক্ষা মধ্যভাগ দ্রুত অগ্রসর হয় । কারণ মধ্যভাগ কেবল হিমবাহের তলদেশ থেকে ঘর্ষণের ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয় ; কিন্তু উভয় পার্শ্ব হিমবাহের তলদেশ ও পার্শ্ব – উভয়দিক থেকেই বাধা পায় । এইভাবে প্রবহমান হিমবাহের মধ্যভাগ অধিক দ্রুত অগ্রসর হওয়ায় এর সম্মুখভাগ অনেকটা জিহ্বার ন্যায় দেখতে হয় । একে স্নাউট ( Snout ) বলে ।
- হিমবাহের পুষ্টি ও ক্ষয়ঃ হিমবাহ প্রধানতঃ তুষারক্ষেত্রে তুষারপাতের দ্বারাই পুষ্টিলাভ করে । উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে নিম্নদিকে প্রবাহিত হিমবাহ প্রধানতঃ গলে গিয়ে বাষ্পীভবনের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । এই প্রক্রিয়াকে অ্যাবলেশন ( Ablation ) বলে । সমুদ্র ও হ্রদের জলে পতিত হিমশৈল বা হিমবাহের সম্মুখভাগ যে প্রক্রিয়ার দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় , তাকে কালভিং ( Calving ) বলা হয় । হিমবাহের প্রবাহ তখনই বজায় থাকবে যখন হিমবাহের ক্ষয় বাৎসরিক তুষারপাতের দ্বারা পূরণ হবে । অর্থাৎ, হিমবাহের ক্ষয় এবং পুষ্টির মধ্যে একটি সমতা থাকবে । হিমবাহের ক্ষয় অপেক্ষা পুষ্টি যদি বেশী হয় , তা হলে হিমবাহ যথেষ্ট সক্রিয় থাকবে এবং তার সম্মুখভাগ ক্রমশ অগ্রসর হতে থাকবে । কিন্তু হিমবাহের পুষ্টি অপেক্ষা ক্ষয় যদি বেশী হয় তা হলে হিমবাহ দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হবে এবং সম্মুখভাগ সংকুচিত হতে থাকবে । একে হিমবাহের প্রত্যাবর্তন বা পশ্চাৎ অপসরণ বলে ।
শ্রেণীবিভাগঃ
হিমবাহ প্রধানত তিন প্রকার, যথা
- উপত্যকা হিমবাহ বা পার্বত্য হিমবাহ (Mountain Glacier / Valley Glacier)
- মহাদেশীয় হিমবাহ (Continental Glacier)
- পাদদেশীয় হিমবাহ (Piedmont Glacier)
উপরের বিষয়টি থেকে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং বিষয়টি আপনার পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।