আমাদের ওয়েবসাইটে সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। ভারতে জলসেচের পদ্ধতি এই বিষয়টি ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় এটি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় তারা খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভারতে জলসেচের পদ্ধতিগুলি লেখ?
ভারতে জলসেচের পদ্ধতিগুলি মূলত তিন প্রকার । যথা – ১. খাল , ২. কূপ ও নলকূপ এবং ৩. জলাশয় । এদের মধ্যে খাল মাধ্যমে শতকরা প্রায় ৪১ ভাগ , কূপ দ্বারা শতকরা প্রায় ৩২ ভাগ , জলাশয় দ্বারা শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ এবং অন্যান্য উপায়ে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ জমিতে জলসেচ করা হয় । জলসেচের এই বিভিন্ন পদ্ধতি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি , ভূগঠন , ভূগর্ভস্থ জল ও তার গুণাগুণের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে । ভারতের বিভিন্ন অংশে খালের সাহায্যে জলসেচ হলেও উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলেই তা প্রাধান্য লাভ করেছে । কূপের দ্বারা জলসেচ প্রধানত উত্তর ভারতে এবং জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচ প্রধানত দক্ষিণ ভারতে অধিক গড়ে উঠেছে । উত্তর ভারতের নরম পলল মৃত্তিকা স্তরে কূপ খনন করা যেরূপ সহজসাধ্য , দক্ষিণ ভারতের কঠিন শিলাস্তরে কূপ খনন তেমনি কষ্টসাধ্য ও ব্যয়সাপেক্ষ । অপরদিকে , দাক্ষিণাত্যের ভূপ্রকৃতিতে বহু অবনমিত অঞ্চল দেখা যায় , যেখানে বাঁধ দিয়ে জল আটকে রেখে জলাশয় সৃষ্টি করা খুবই সহজ ব্যাপার । নিচে ভারতে জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল
- খালের সাহায্যে জলসেচঃ ভারতে বর্তমানে অধিকাংশ জমিতে খালদ্বারা জলসেচ হয়ে থাকে । খাল দুই প্রকারের , যথা
- ( ক ) প্লাবন খালঃ নদীর পার্শ্ব থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় যে দীর্ঘ খাল কেটে বর্ষাকালে বন্যার অতিরিক্ত জল দূরবর্তী কৃষিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হয় , তাকে প্লাবন খাল বলে । এইসকল খালে কেবল বর্ষাকালেই জল থাকে । অন্য সময় নদীর জল কমে গেলে কিংবা কোন বৎসর অনাবৃষ্টি হলে খালে জল প্রবাহিত হয় না । ফলে সেচকার্য বন্ধ হয়ে যায় । এই কারণে বর্তমানে প্রায় সব প্লাবন খালকেই স্থায়ী খালে পরিণত করা হচ্ছে ।
- ( খ ) স্থায়ী খাল বা নিত্যবহ খালঃ নদী যেখানে পাহাড় বা মালভূমি থেকে সমভূমিতে মিলিত হয়েছে , সেখানে নদীর এক তীর থেকে অপর তীর পর্যন্ত সুদৃঢ় বাঁধ ( Barrage Or, Dam ) নির্মাণ করে তার পশ্চাতে জলাধার সৃষ্টি করা হয় । এই জলাধার থেকে যে খাল মাধ্যমে সারা বৎসর যান্ত্রিক উপায়ে প্রয়ােজনমত জল ছেড়ে সেচকার্য চালান হয় , তাদের স্থায়ী খাল বা নিত্যবহ খাল বলে । প্রধান খাল থেকে আবার শাখাখাল মাধ্যমে চতুর্দিকে জল নিয়ে যাওয়া হয় । এই ধরনের খালে সারা বৎসর জল থাকে । স্বাধীনতালাভের পর ভারতে বিভিন্ন বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা রূপায়ণের ফলে এই ধরনের সেচখালের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে ।
- বন্টনঃ ভারতে প্রায় ১৬ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয় । উত্তর ভারতের ( প্রায় ৬০% ) উত্তরপ্রদেশ , হরিয়ানা , পাঞ্জাব , রাজস্থান , বিহার এবং দক্ষিণ ভারতের ( প্রায় ৪০% ) অন্ধ্রপ্রদেশ , কর্ণাটক , তামিলনাড়ু , মহারাষ্ট্র , মধ্যপ্রদেশ , ছত্তিশগড় রাজ্যে খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয় ।
- ২. কুপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচঃ কূপের সাহায্যে জলসেচ বহু প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে । খাল বা জলাশয় দ্বারা ভূপৃষ্ঠের জল ব্যবহার করা হয় । কিন্তু কূপ বা নলকূপ মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলকে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয় । যে সকল অঞ্চলে খাল পৌছতে পারে না , সেই সকল স্থানে কূপ বা নলকূপ মাধ্যমে ভূগর্ভের জলকে সহজেই কাজে লাগান যায় । কূপ সাধারণত স্থায়ী বা পাকা এবং অস্থায়ী বা কাঁচা – এই দুই ধরনের হয় । কুপ থেকে জল তােলা এক বিশেষ সমস্যা । এর জন্য বলদ , উট প্রভৃতি পশুর সাহায্য নেওয়া হয় । পারসিক চাকার ( Persian wheel ) সাহায্যে বহু কূপ থেকে জল তােলা হয় । এতে একটি চাকার গায়ে অনেকগুলি ছােট ছােট বাতির মত পাত্র লাগান থাকে । কোনও পশুর সাহায্যে এই চাকাটি কূপের মধ্যে ঘুরতে থাকে । তার ফলে পাত্র এক এক করে জল ভরে উপরে উঠে আসে এবং উপরে জল তুলে পুনরায় কূপের মধ্যে খালি অবস্থায় ফিরে যায় । কূপ থেকে জল তোলা অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য বলে বর্তমানে অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে বহু কূপ বা নলকূপ থেকে জল তুলে সেচকার্য করা হয় । উত্তরপ্রদেশের বৈদ্যুতিক নলকূপের সংখ্যা খুবই বেশী । উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে , উত্তরপ্রদেশ , বিহার , পাঞ্জাব , রাজস্থান এবং গুজরাট , মহারাষ্ট্র , অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অঞ্চলে কূপের সাহায্যে যথেষ্ট জলসেচ হয় । সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গেও বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত অগভীর ও গভীর নলকূপের সাহায্যে যথেষ্ট জলসেচ হচ্ছে ।
- বন্টনঃ উত্তরপ্রদেশ , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , বিহার , পশ্চিমবঙ্গ , তামিলনাড়ু , তেলেঙ্গানা , অন্ধ্রপ্রদেশ , গুজরাট প্রভৃতি রাজ্যে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়।
- ৩. জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচঃ উত্তর ভারতের নরম পলিগঠিত সমভূমিতে কূপ খনন করা যেমন সুবিধাজনক , দক্ষিণ ভারতেও তেমনি অবনমিত অঞ্চলে বা নদী উপত্যকায় বাঁধ দিয়ে বর্ষার জল ধরে রেখে জলাশয় নির্মাণ করার যথেষ্ট সুবিধা আছে । এইরকম জলাশয় গ্রীষ্মকালে বা অনাবৃষ্টির সময় শুকিয়ে যায় বলে সেচকার্যে অসুবিধা দেখা দেয় । এই অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও তামিলনাড়ুর চিঙ্গলপুট , উত্তর ও দক্ষিণ আর্কট এবং অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর ও ওয়ারাঙ্গাল জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলাশয়ের সাহায্যে সেচকার্য হয় ।
- বন্টনঃ দাক্ষিণাত্যের অন্ধ্রপ্রদেশ , তামিলনাড়ু , কর্ণাটক রাজ্যে এই পদ্ধতির প্রচলন সবচেয়ে বেশি হলেও পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , উত্তরপ্রদেশ , ওড়িশা , মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যেও এই পদ্ধতিতে জলসেচ হয়ে থাকে ।
উপরোক্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো বিস্ময় থাকলে নীচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কাছে সাহায্য দায়ক মনে হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করে তাদের কেও সাহায্য করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।