বায়ুচাপ বলয় কি?

4
বায়ুচাপ বলয় কি?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই আজ আমরা অধ্যায়ন করবো ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই উপকারী। এই বিষয়টি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে তাই তাদের কাছে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুচাপ বলয় কি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

বায়ুচাপ বলয় কি?

ভূপৃষ্ঠের উপর নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর সমধর্মী বায়ুস্তর অনুভূমিকভাবে প্রায় হাজার কিলোমিটার জুড়ে পুরো পৃথিবীকে কয়েকটি বলয়ের আকারে বেষ্টন করে আছে । এগুলি বায়ুচাপ বলয় (Pressure Belts of Wind) নামে পরিচিত ।

চাপের তারতম্য অনুসারে ভূ-পৃষ্ঠকে সাতটি নির্দিষ্ট বায়ুচাপ বলয়ে বিভক্ত করা হয়েছে । যথা – নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় মকরীয় উচ্চচাপ বলয়, সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, সুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়কুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় । এগুলি সম্পর্কে নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ঃ

নিরক্ষরেখার উভয়পাশে ৫°-১০° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত নিম্নচাপ অঞ্চলটি নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় নামে পরিচিত । নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে সর্বদা ঊর্দ্ধগামী হয় । ফলে এখানে বায়ুর সমান্তরাল বা পার্শ্বপ্রবাহ বিশেষ দেখা যায় না । তাই এই অঞ্চলে বায়ুমন্ডলে সবসময় শান্তভাব লক্ষ্য করা যায় । সেইজন্য এই অঞ্চলকে নিরক্ষীয় শান্ত বলয় বা ডোলড্রাম (Doldrum) বলা হয় । নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে সর্বদা ঊর্দ্ধগামী হয় । ফলে এই অঞ্চলে প্রায় সারাবছর ধরেই নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় । এই নিম্নচাপজনিত বায়ূর শূণ্যতা পূরণ করার জন্য এই অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুদক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ছুটে এসে পরস্পরের সাথে মিলিত হয় । সেই কারণে একে আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন অঞ্চল বা আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল অথবা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসরণ বলয় (ITCZ অর্থাৎ Inter-Tropical Convergence Zone) বলা হয় ।

সৃষ্টির কারণঃ 

এই অঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. সূর্যরশ্মির লম্বভাবে কিরণঃ নিরক্ষরেখার উভয়পাশে ৫°-১০° উঃ/দঃ অক্ষাংশের মধ্যে সারা বছর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় । ফলে এই অঞ্চলের বায়ু অন্যান্য অঞ্চলের বায়ুর তুলনায় অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও লঘু হয় ।
  2. জলভাগের প্রাধান্যঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগের প্রাধান্য বেশী । এই জলভাগ থেকে সূর্যের প্রচন্ড তাপে প্রচুর জলীয় বাষ্প উত্থিত হয়ে বায়ুতে মিশে যায় ।
  3. পৃথিবীর আবর্তন গতিঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত ঘূর্ণনের বেগ সর্বাধিক থাকায় এই অঞ্চলের উচ্চস্তরের উষ্ণ ও আর্দ্র হালকা বায়ু উত্তর ও দক্ষিণ উভয়দিকে ছিটকে পড়ে ।

এই তিনটি কারণের সম্মিলিত ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে ।

কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় মকরীয় উচ্চচাপ বলয়ঃ

নিরক্ষরেখার উভয়পাশে ২৫°-৩৫° উঃ/দঃ অক্ষাংশে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলসংশ্লিষ্ট উচ্চচাপ বলয় দুটিকে উত্তর গোলার্ধে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় ও দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় উচ্চচাপ বলয় বলে । কর্কটীয় ও মকরীয় অঞ্চলে বায়ুর গতি সর্বদাই ঊর্দ্ধমুখী ও নিম্নমুখী হয় এবং কখনই ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয় না বলে বায়ুপ্রবাহের অস্তিত্ব প্রায় একপ্রকার বোঝাই যায় না । এই জন্য এই দুই অঞ্চলকে কর্কটীয় শান্ত বলয়মকরীয় শান্ত বলয় বলা হয় ।

সৃষ্টির কারণঃ 

এই অঞ্চলে উচ্চচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. সূর্যরশ্মির পতনকোণঃ এই অঞ্চলে সূর্য বছরের অধিকাংশ সময়ই তীর্যকভাবে কিরণ দেওয়ার ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় এখানকার বায়ু শীতল ও ভারী হয় ।
  2. জলীয় বাষ্পের স্বল্পতাঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলে বাষ্পীভবনের হার কম হওয়ায় বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম হয় । ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের বায়ু ওপেক্ষাকৃত ভারী হয়ে পড়ে ।
  3. পৃথিবীর আবর্তন গতিঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ, আর্দ্র ও হালকা বায়ু উপরে উঠে পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় এবং ক্রমশ তা প্রসারিত, শীতল ও ভারী হয়ে কর্কটীয় অঞ্চলে ও মকরীয় অঞ্চলে নেমে আসে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে ।
  4. মেরুদ্বয় থেকে আগত শীতল ও ভারী বায়ুঃ মেরুদ্বয় থেকে শীতল ও ভারী উচ্চচাপযুক্ত বায়ু ভূপৃষ্ঠ বরাবর নিরক্ষরেখার দিকে অগ্রসর হয় । কর্কটীয় ও মকরীয় অঞ্চলে এই ভারী বায়ুর প্রভাবে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয় ।

সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ঃ 

উভয় গোলার্ধে ৬০°-৭০° উঃ/দঃ অক্ষাংশে দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলসংশ্লিষ্ট নিম্নচাপ বলয়দুটিকে উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় ও দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় বলা হয় ।

সৃষ্টির কারণঃ 

এই অঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. উত্তাপের আধিক্যঃ মেরু অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলে উত্তাপ কিছুটা বেশী হওয়ায় এখানকার বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ঊর্দ্ধগামী হয়ে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় ।
  2. জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিঃ এই অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকে । ফলে জলীয় বাষ্পপূর্ণবায়ু হালকা হয়ে ঊর্দ্ধগামী হয় ।
  3. পৃথিবীর আবর্তন বেগঃ এই অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ মেরু অঞ্চল থেকে কিছুটা বেশী হওয়ার ফলে বাতাস বাইরের দিকে ছিটকে গিয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ।
  4. সমুদ্রস্রোতের প্রভাবঃ এই অঞ্চলে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে অনেক উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের আগমনের ফলে এখানাকার উষ্ণতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় । ফলে বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ঊর্দ্ধগামী হয়ে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় ।

সুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় কুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ঃ

উভয় গোলার্ধের গড়ে ৮০° উঃ/দঃ থেকে মেরুবিন্দু পর্যন্ত অবস্থিত উচ্চচাপ বলয়দুটিকে উত্তর গোলার্ধে সুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় ও দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বলে ।

সৃষ্টির কারণঃ 

এই অঞ্চলে উচ্চচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলি হলো নিম্নরূপ

  1. সুর্যরশ্মির পতনকোণঃ এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারাবছর ধরেই অত্যন্ত তীর্যকভাবে কিরণ দেওয়ার ফলে প্রায় সারাবছরই উষ্ণতা খুবই কম থাকে । এমনকি গ্রীষ্মকালেও উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে থাকে । যে কারণে এই অঞ্চলের শীতল ভারী অধিক ঘনত্বযুক্ত বায়ু উচ্চচাপ সৃষ্টি করে ।
  2. জলীয় বাষ্পের স্বল্পতাঃ এই অঞ্চলে উষ্ণতার অভাবে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া ব্যহত হয় । ফলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকার কারণে শুষ্ক বায়ু অপেক্ষাকৃত ভারী হয় ।
  3. পৃথিবীর আবর্তন গতির বেগঃ মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ সবথেকে কম থাকার ফলে এখানে বায়ু বিক্ষিপ্ত হয় না । ফলে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়।
  4. বায়ুর নিমজ্জনঃ মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের ঊর্দ্ধগামী বিক্ষিপ্ত বায়ু এই অঞ্চলে শীতল ও ভারী হয়ে নেমে এসে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কোনো সাহায্যপ্রাপ্ত হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও প্রশ্নের বিষয়টি শেয়ার করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ। 

4 COMMENTS

Comments are closed.