পেডিমেন্ট (Piedmont): সংজ্ঞাঃ মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে পাহাড়ের পাদদেশে গঠিত শিলাময়, মৃদু ঢালযুক্ত, প্রায় সমতল ভূমিকে পেডিমেন্ট (Piedmont) বলে । বাজাদা এর পরবর্তী অংশ । ‘Pedi’ শব্দের অর্থ ‘পাদদেশ’ ও ‘Mont’ শব্দের অর্থ ‘পাহাড়’ ।
উদাঃ সাহারা মরুভূমিতে পাহাড়ের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায় ।
উৎপত্তিঃ পেডিমেন্টের উৎপত্তি সম্বন্ধে যথেষ্ট মতভেদ ( বিশেষতঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ) আছে । একদল বিজ্ঞানী এটি নদীর পার্শ্বক্ষয়ের ( Lateral Planation ) ফলে গঠিত হয়েছে বলে মনে করেন । পেডিমেন্টের উপরিভাগের অবতল ঢাল , উপরি অংশে ঢালের ছেদ বা নিক – এর অবস্থান এই মতবাদকে সমর্থন করে । অপর একদল বিজ্ঞানী মনে করেন , শুষ্ক এবং প্রায় – শুষ্ক অঞ্চলে ঢালের পশ্চাৎ অপসরণের ফলে পেডিমেন্ট গঠিত হয়েছে । আর্দ্র নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলের এবং শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়কার্যের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে , আর্দ্র অঞ্চলে বহুদিন ধরে ক্ষয়কার্যের ফলে যে সময় ভূমির সৃষ্টি হয় তার ঢাল ক্রমশ কমতে থাকে । কিন্তু শুষ্ক অঞ্চলে পর্বতের সম্মুখভাগে যে খাড়া ঢাল ( প্রায় ৩০ °) থাকে তার সাথে পেডিমেন্টের ঢালের ( ৬ ° হইতে ৭ ° ) যে পার্থক্য তা আবহবিকার ও নগ্নীভবনের ক্ষয়কার্যের ফলেও প্রায় একই থেকে যায় । একে ঢালের সমান্তরালভাবে পশ্চাৎ অপসরণ বলে । আফ্রিকায় ভূ – বিজ্ঞানিগণ একে ভৃগুতট পশ্চাৎ অপসরণ বলে থাকেন ।
শ্রেণীবিভাগঃ পেডিমেন্ট মূলত তিন প্রকার । যথা –
১. লুক্কায়িত পেডিমেন্টঃ পেডিমেন্টের উপরিভাগ অনেক সময় হালকা পলির আবরণে ঢাকা থাকে । তখন একে লুক্কায়িত পেডিমেন্ট ( Concealed Pedirnent ) বলে ।
২. সমবেত পেডিমেন্টঃ পার্বত্য উপত্যকা পেডিমেন্টের ঢালে এসে যেখানে মিলিত হয় সেখানে পেডিমেন্ট প্রসারিত হয়ে অনেক সময় একটি অপরটির সাথে মিলিত হয় । একে সমবেত পেডিমেন্ট ( Coalescing Pediments ) বলা হয় ।
ও
৩. ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্টঃ অনেক সময় পেডিমেন্ট জলধারার দ্বারা ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে , তখন তাহাকে ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট ( Dissected Pediments ) বলে ।
বৈশিষ্ট্যঃ পেডিমেন্ট – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ –
ক) পেডিমেন্টের উপরের দিকের ঢাল ৭° ও নিচের দিকের ঢাল ১° / ২° এর মত হয় । কিন্তু পর্বতের সম্মুখে যেখানে পেডিমেন্টের ঢাল পর্বতগাত্রে মিলিত হয় সেখানে ঢালের পরিমাণ ১৫ ডিগ্রী হইতে প্রায় খাড়া অবস্থায় থাকে ।
খ) এটি ছোট-বড় প্রস্তরখন্ড, নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি দ্বারা গঠিত হয় ।
গ) যেখানে পেডিমেন্ট পর্বতগাত্রে মিলিত হয় সেখানে ঢালের মধ্যে একটি ছেদ বা নিক ( Nick ) -এর সৃষ্টি হয় ।
ঘ) পেডিমেন্টের উপরিভাগ প্রায় সমতল বা কিছুটা অসমতল ( Concave ) হয় ।

বাজাদা (Bajada): সংজ্ঞাঃ পেডিমেন্টের নিচের অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা বাহিত হয়ে সুক্ষ্ম বালি, পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে প্রায় সমভূমির ন্যায় ভুমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে বাজাদা (Bajada) বলে । ‘Bajada’ শব্দটি একটি স্প্যানিশ শব্দ ‘Bahada’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘পাশাপাশি সৃষ্ট একাধিক পলি শংকুগঠিত সমভূমি’ ।
উদাঃ সাহারা মরুভূমিতে পাহাড়ের পাদদেশে পেডিমেন্টের সাথে বাজাদা দেখা যায় ।
বৈশিষ্ট্যঃ বাজাদা – র বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ –
ক) এটি পেডিমেন্টের পরবর্তী অংশ ।
খ) এর ঢাল অত্যন্ত কম (১/২° – ১°) ।
গ) অপেক্ষাকৃত সুক্ষ্ম বালি, পলি প্রভৃতি দ্বারা বাজাদা গঠিত হয় ।
ঘ) প্রকৃত বাজাদা জলধারা বা নদীবাহিত বালু ও পলি সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্ট পাখার ন্যায় দেখিতে কয়েকটি পলি – গঠিত ভূ – ভাগের সংযুক্তির ফলে গড়ে উঠে ।
ঙ) বাজাদার উপরিভাগ ঈষৎ তরঙ্গায়িত হয়ে থাকে ।