আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যে বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি তারা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। নদীর ক্ষয়কার্য ও ক্ষয়কার্যের প্রক্রিয়াসমূহ এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নদীর ক্ষয়কার্য ও ক্ষয়কার্যের প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে লেখো ?
নদীর তিনপ্রকার কার্যের (যথা – ক্ষয়কার্য, বহনকার্য ও অবক্ষেপণকার্য) মধ্যে ক্ষয়কার্যই হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ । কারণ ক্ষয়কার্যের উপরেই নদীর অবশিষ্ট আর দুটি কার্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ – দুরকমভাবেই নির্ভর করে । নদী তার বিশেষ কয়েকটি ধর্ম যেমন – প্রবল গতিশক্তি, জলরাশির চাপ, দ্রবণ প্রভৃতি দ্বারা নদী উপত্যকাসংশ্লিষ্ট শিলাস্তরকে বিভিন্নমাত্রায় ও বিভিন্নভাবে ক্ষয় করতে করতে প্রবাহিত হতে থাকে । নদীর এরূপ কার্যকে নদীর ক্ষয়কার্য (Erosional Works of River) বলা হয় ।
বৈশিষ্ট্যঃ
নদীর ক্ষয়কার্য – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ
- নদীর ক্ষয়কার্যের পরিমান নির্ভর করে নদীর গতিবেগ, জলের পরিমান, স্থানীয় শিলাস্তরের গাঠনিক প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয়ের উপর ।
- নদীর ক্ষয়কার্যই প্রকারান্তরে নদীর অপর দুটি কার্য যথা – বহন কার্য ও অবক্ষেপণ কার্যকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রন করে ।
- নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সামগ্রিক উচ্চতা ও প্রশস্ততা হ্রাস পেতে থাকে ।
- নদী অববাহিকার পরিবর্তন সাধিত হয় ।
প্রক্রিয়াঃ
নদীর ক্ষয়কার্য – এর প্রক্রিয়া মূলতঃ পাঁচ প্রকার । যথা
- জলপ্রবাহজনিত ক্ষয় (Hydraulic Action): নদীর প্রবল গতিসম্পন্ন জলপ্রবাহের আঘাতে নদীখাত ও নদীপার্শ্বস্থ অপেক্ষাকৃত কোমল ও আলগা শিলাখন্ডগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ভেঙ্গে যায় ও জলপ্রবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে এগিয়ে চলে । একে নদীর জলপ্রবাহজনিত ক্ষয় (Hydraulic Action) বলে ।
- ঘর্ষণজনিত ক্ষয় (Attrition): নদীবাহিত প্রস্তরখন্ডগুলি (Boulders) একটি অপরটির সাথে সংঘর্ষের ফলে ভেঙ্গে গিয়ে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তরখন্ডে এবং অবশেষে বালুকণায় পরিনত হয় । একে নদীর ঘর্ষণজনিত ক্ষয় (Attrition) বলে ।
- অবঘর্ষজনিত ক্ষয় (Corrasion): নদীবাহিত প্রস্তরখন্ডগুলি চলতে চলতে নদীখাতের সাথে সংঘর্ষে সৃষ্টি করে । ফলে নদীবক্ষ ভীষণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । নদীর এরূপ ক্ষয়কে অবঘর্ষজনিত ক্ষয় (Corrasion) বলে ।
- দ্রবণজনিত ক্ষয় (Solution): স্থানীয় শিলাস্তরের বিশেষ প্রকৃতি (যেমন – চুনাপাথর, লবণশিলা প্রভৃতি) অথবা নদীর জলের বিশেষ প্রকৃতি (যেমন – অত্যাধিক অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব) জনিত কারণে অনেকসময় নদীর গতিপথে অবস্থিত শিলা দ্রুত গলে গিয়ে বা দ্রবীভূত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । নদীর এরূপ ক্ষয়কে দ্রবণজনিত ক্ষয় (Solution) বলে।
- বুদবুদজনিত ক্ষয় (Bubble Erosion): নদীর জলস্রোতের মধ্যে বুদবুদ সৃষ্টি হয় । এই বুদবুদ্গুলি জলপ্রবাহের মধ্যে চাপা পড়ে থাকলে তার মধ্যে বাতাসের চাপ প্রচন্ড থাকে । পরবর্তীতে এই বুদবুদ্গুলি মুক্ত হলে তা নদীপার্শ্বস্থ বা নদীমধ্যস্থ শিলাস্তরের গাত্রে ফেটে যায় । এইভাবে অজস্র বুদবুদ ক্রমাগত শিলাগাত্রে ফাটতে থাকলে শিলাগাত্রে ক্রমশঃ মৌচাকের ছিদ্রের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত সৃষ্টি হয় । একে নদীর বুদবুদজনিত ক্ষয় (Bubble Erosion) বলে ।
সৃষ্ট ভূমিরূপসমূহঃ
নদীর ক্ষয়কার্য – এর ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হলো
- ‘V’ – আকৃতির উপত্যকা (‘V’ – shaped Valleys) ও গিরিখাত (Gorges)
- ‘I’ – আকৃতির উপত্যকা (‘I’ – shaped Valleys) ও ক্যানিয়ন (Canyons)
- জলপ্রপাত (Waterfalls)
- কর্তিত শৈলশিরা (Truncated Spur)
- শৃঙ্খলিত শৈলশিরা (Interlocking Spur)
- মন্থকূপ (Pot Holes)
উপরের বিষয়টি থেকে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং বিষয়টি আপনার পছন্দ হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।
নদীর জলের উচ্চতার পরিবর্তনের ছন্দ কে ——– বলে।
Comments are closed.