আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই, আজ আমরা ভূগোলের একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো যে প্রশ্নটি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে। তাই প্রশ্নটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কৃষিকার্য কি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কৃষিকার্য সম্পর্কে লেখো ?
বুৎপত্তিগত অর্থঃ
Agriculture শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ‘Ager’ যার অর্থ খেত বা জমি ও ‘Culture’ যার অর্থ পরিচর্যা থেকে ; বাংলায় ‘কৃষিকার্য’ বা ‘কৃষিকাজ’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ধাতু ‘কৃষ্’ থেকে, যার অর্থ ‘কর্ষণ করা’ ।
সংজ্ঞাঃ
মানুষ যে প্রচেষ্টার দ্বারা জমি চাষ করে ফসল এবং অন্যান্য উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ দ্রব্য উৎপাদন করে, তাকে কৃষিকার্য বা কৃষিকাজ (Agriculture) বলে । বিশিষ্ট অর্থনীতিক ভূগোলবিদ জিম্যারমান – এর মতে, “কৃষিকার্য হলো মানুষের সেই সমবেত উৎপাদন প্রক্রিয়া, যা ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী মানুষ উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের স্বাভাবিক জন্ম-বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে নিজ চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ দ্রব্য উৎপাদন করার চেষ্টা করে”। এই সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, কৃষিকাজ বলতে কেবলমাত্র কৃষিজ ফসল উৎপাদনকেই বোঝায় না, তার সঙ্গে প্রাণীজ সম্পদ উৎপাদনকেও বোঝানো হয় । ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি বর্তমানে পশুপালন, লাক্ষা ও রেশমকীট প্রতিপালন, দুগ্ধ ও পশম উৎপাদন, কীটপতঙ্গ নিধন, আগাছা নিবারন, জলসেচ, কৃষিজ ফসল সংরক্ষণ ও বিক্রয়, কৃষি গবেষণাগার, কৃষি ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত বিষয়াবলীও কৃষিকার্যের অন্তর্গত ।
বৈশিষ্ট্যঃ
কৃষিকাজ (Agriculture) – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো নিম্নরূপ
- এটি অন্যতম প্রাথমিক অর্থনৈতিক কার্যাবলী ।
- এটি প্রাচীনকাল থেকে পরিচালিত হয়ে আসা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া ।
- কৃষক ও কৃষিমজুর এই প্রক্রিয়ার প্রধান পরিচালক ।
- সার, বীজ, কীটনাশক, জলসেচ, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রভৃতি এই ব্যবস্থার ইনপুট ও উৎপাদিত ফসল হলো আউটপুট ।
- খাদ্য মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা; সেটি মেটানোর লক্ষেই এটি পরিচালিত হয় ।রচ) দৈশিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এর বৈশিষ্ট্যাবলী পরিবর্তিত হয় ।
গুরুত্বঃ
কৃষিকাজ (Agriculture) – এর গুরুত্বগুলি হলো নিম্নরূপ
- খাদ্যের যোগানঃ ধান-গম প্রভৃতি খাদ্যফসল, চা-কফি প্রভৃতি পানীয় ফসল, শাক-সবজী, দুধ-মাছ-মাংসসহ পৃথিবীর যাবতীয় খাদ্যের যোগান মেটে কৃষিকাজের মধ্য দিয়ে।
- কর্মসংস্থানঃ কৃষিকাজ পরিচালনার মধ্য দিয়ে জনসংখ্যার এক বিরাট অংশের কর্মসংস্থান ঘটে । প্রাথমিক কার্যাবলীভুক্ত মানুষের বেশীরভাগই কৃষিকাজের সাথে যুক্ত এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অন্যান্য প্রাথমিক কার্যাবলীভুক্তদের থেকে বেশী ।
- কাঁচামালের যোগানঃ অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যাবলীর জন্য প্রয়োজনিয় কাঁচামালের একটি বিরাট অংশ আসে কৃষিকার্যজনিত উৎপাদন থেকে । পাটশিল্পের পাট, বস্ত্রবয়ন শিল্পের কার্পাস তুলা, চা শিল্পের চা প্রভৃতি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ।
- পশুখাদ্যের যোগানঃ মানুষের খাদ্যের যোগান দেওয়ার পাশাপাশি আলফা-আলফা, হে, যব, ভুট্টা প্রভৃতি বিভিন্নধরনের খাদ্যশস্যের যোগান কৃষিকাজের মধ্য দিয়ে মেটানো হয় ।
- জিডিপি বৃদ্ধিঃ কৃষিপ্রধান দেশগুলির জাতীয় আয়ের মূল উৎসই হলো কৃষিকাজ । উন্নত ও আধুনিক কৃষিব্যবস্থা কৃষিনির্ভর দেশগুলির শক্তিশালী জিডিপি-র ভিত্তি ।
- বিদেশি মুদ্রা অর্জনঃ খাদ্যের চাহিদা সারা পৃথিবীর জুড়েই । গম, ধান, চা, কফি প্রভৃতি আন্তর্জাতিক চাহিদাসম্পন্ন ফসল রপ্তানি করে পৃথিবীর বহুদেশ প্রচুর বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে ।
- শিল্পের বিকাশঃ কৃষিকাজের প্রসারলাভ হলে কৃষিনির্ভর শিল্পগুলিরও বিকাশ ঘটে; যেমন – সার শিল্প, পাম্পনির্মাণ শিল্প, কীটনাশক শিল্প, পরিবহন শিল্প প্রভৃতি ।
শ্রেণিবিভাগঃ
কৃষিকার্য হলো সমগ্র বিশ্বব্যাপি বন্টিত, সময় ও পরিস্থিতির সাথে সাথে বিবর্তিত হয়ে আসা প্রাথমিক কার্যাবলী । নিচে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এর শ্রেণিবিভাগ করা হল
- আর্দ্রতা অনুসারে – আর্দ্র কৃষি, শুষ্ক কৃষি ও সেচন কৃষি
- মালিকানা অনুসারে – ব্যক্তিগত খামার কৃষি, যৌথ খামার কৃষি ও রাষ্ট্রীয় খামার কৃষি
- জনসংখ্যার চাপ অনুসারে – নিবিড় কৃষি ও ব্যাপক কৃষি
- প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা অনুসারে – আদিম জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ও আধুনিক কৃষি । আদিম জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি আবার দুই প্রকার । যথা – ১. অস্থায়ী আদিম জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ও ২. স্থায়ী আদিম জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি । অপরদিকে, আধুনিক কৃষি ছয় প্রকার । যথা – ১. নিবিড় জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ২. ব্যাপক বানিজ্যিক কৃষি ৩.মিশ্র কৃষি ৪. দুগ্ধ কৃষি ৫. শষ্য খামার ও ৬. বাগিচা কৃষি । এদের মধ্যে শষ্য খামার আবার ছয় প্রকার । যথা – a) ভূ-মধ্যসাগরীয় কৃষি b) উদ্যান কৃষি বা হর্টিকালচার c) দানাশষ্য খামার d) তুলাচাষের খামার e) বানিজ্যিক পশুচারণ f) কৃষি বনসৃজন (সিলভিকালচার, আরবারিকালচার, শক্তি আবাদ ও অন্যান্য কৃষি বনসৃজন) এবং বাগিচা কৃষি আবার তিনপ্রকার । যথা – a) পানীয় ফসল বাগিচা কৃষি b) ফল বাগিচা কৃষি ও c) শিল্পভিত্তিক কাঁচামাল বাগিচা কৃষি ।
- ফলন অনুসারে – ক) একফসলি কৃষি খ) দো-ফসলি কৃষি গ) বহুফসলি কৃষি ও আন্তঃকৃষি বা ইন্টারকালচার ।
উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছেও শেয়ার করুন। প্রশ্নের বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য অথবা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ(PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।