বজ্রঝড় কি ?

0
বজ্রঝড় (Thunderstorm) কি ?

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই আজ আমরা অধ্যায়ন করবো ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে যে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই উপকারী। এই বিষয়টি ছাত্রছাত্রীরা অধ্যায়ন করলে পরীক্ষায় খুব সহজেই ভালো নম্বর অর্যন করতে পারবে তাই তাদের কাছে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বজ্রঝড় কি এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Advertisement

বজ্রঝড় (Thunderstorm) কি ?

সংজ্ঞাঃ

আর্দ্রতা ও শক্তির দ্রুত সঞ্চালন ও শক্তিশালী বায়ু-আবর্ত (Vortex) গঠনের মধ্য দিয়ে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে যে ভয়াবহ ঝড়ের সৃষ্টি হয়, তাকে বজ্রঝড় (Thunderstorm) বলে ।

বন্টনঃ

সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ৪৪,০০০ বজ্রঝড় সংঘটিত হয়ে থাকে । এদের মধ্যে অধিকাংশই নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে সংঘটিত হয়ে থাকে । বায়ুর অধিক আর্দ্রতা, প্লবতা, অভিসরণ ও পূবালী তরঙ্গের প্রভাবে প্রায় সারা বছর ধরেই এই অঞ্চলে বজ্রঝড় সংঘটনের জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকে । নিরক্ষীয় অঞ্চলের প্রসারিত অংশে বছরে ১০০ – ১৮০ দিন, আবার কোথাও কোথাও ২০০ দিনেরও বেশী বজ্রঝড় হয়ে থাকে । নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে বজ্রঝড়ের সংখ্যা ক্রমশঃ কমতে থাকে । তবে দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগের পরিমাণ বেশী বলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অনেক বেশী সংখ্যক বজ্রঝড় সংঘটিত হয়ে থাকে । কিন্তু এরপর থেকে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে বায়ুর তাপমাত্রা কমতে থাকে বলে বজ্রঝড়ের সংখ্যাও কমতে থাকে । উভয় গোলার্ধেই ৬০° অক্ষাংশের পর থেকে বজ্রঝড় একপ্রকার হয় না বললেই চলে । সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণের সাথে সাথে বজ্রঝড় সংঘটনের অঞ্চলও যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণদিকে স্থান পরিবর্তন করে । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, উপক্রান্তীয় অঞ্চলের মরুভূমিগুলিতে বছরে কোথাও গড়ে ৫-২০ দিন, আবার কোথাও কোথাও ৫ দিনেরও কম বজ্রঝড় সংঘটিত হয়ে থাকে ।

বৈশিষ্ট্যঃ

বজ্রঝড় – এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ

  1. বিস্তারঃ বজ্রঝড়ের বিস্তার সাধারণত ১-২ কিলোমিটারের মত কম অঞ্চল জুড়ে হলেও বিষয়ান্তরে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বজ্রঝ্রড়ের বিস্তার ৮-১০ কিলোমিটারেরও বেশী অঞ্চল জুড়ে হতে পারে ।
  2. গতিবেগঃ বজ্রঝ্রড়ের বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ মূলতঃ ঘন্টায় ৮০ – ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বজ্রঝড়ের দমকা বায়ুপ্রবাহ অনেকসময় ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটারেরও বেশী গতিবেগে প্রবাহিত পারে ।
  3. স্থায়ীত্বঃ বজ্রঝড় ১৫-৩০ মিনিটের মত স্বল্পস্থায়ী হয়, কিন্তু অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বজ্রঝড়ের স্থায়িত্ব অনেকক্ষেত্রেই দু ঘণ্টারও বেশী স্থায়ী হতে পারে ।
  4. বৃষ্টিপাতঃ বজ্রঝড় স্বল্পস্থায়ী হলেও ঐ অল্প সময়ের মধ্যেই তা প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় । বজ্রঝড় থেকে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ভর করে বজ্রঝড়ের ঝড়কোষের অবস্থা, আকার ও সংখ্যার উপর । ছোট ঝড়কোষ থেকে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব সাধারণত ১৫-২০ মিনিট ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১-৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে । আবার, অতিকায় ঝড়কোষ (Super Cell) বা বহুঝড়কোষ বিশিষ্ট বজ্রঝড় থেকে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব ১-২ ঘণ্টা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০-২০ সেন্টিমিটার, এমনকি বিশেষ অবস্থানুযায়ী তা ৪০ সেন্টিমিটার অবধিও হতে পারে ।
  5. শিলাবৃষ্টিঃ বজ্রঝড়ের ঝড়োপুঞ্জ মেঘের উপরিভাগ হিমরেখার অনেক উপরে থাকে বলে ঐ অংশে কঠিন ঘনীভবন হয়, যা শিলাবৃষ্টিরূপে নিচে অধঃক্ষেপিত হয়ে থাকে । এদের ব্যাস সাধারণত ০.৫-১ সেন্টিমিটার হলেও বিশেষ অবস্থানুযায়ী তা ৭ সেন্টিমিটার অবধিও হতে পারে ।
  6. বজ্রপাত ও বৈদ্যুতিক চার্জের সমতাঃ বজ্রঝড়ের ঝড়োপুঞ্জ মেঘে বিদ্যুৎপাতের ফলে ২৮,০০০°C-৩০,০০০°C উষ্ণতার সমপরিমাণ উত্তাপের সৃষ্টি হয় । এর ফলে বায়ুতে যে কম্পন বা তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা বজ্রের আকারে ৩০০ মিটার / সেকেন্ড বেগে প্রবাহিত হয় ও কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই তার শব্দ কানে পৌছায় । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বজ্রঝড়ে এই বিদ্যুৎ – এর সৃষ্টি হয় ভূ-পৃষ্ঠ ও আয়নোস্ফিয়ারের মধ্যে বৈদ্যুতিক চার্জ বিনিময়ের মাধ্যমে । স্বাভাবিক আবহাওয়ায় আয়নোস্ফিয়ার থেকে ধনাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ পৃথিবীতে আসতে থাকে । এভাবে কেবল ধনাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ পৃথিবীর দিকে একটানা আসতে থাকলে পৃথিবীর ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতো । কিন্তু বজ্রঝড়ের সময় মেঘের ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ পৃথিবীর দিকে এসে সেই ঘাটতি পূরণ করে পৃথিবীর ঋণাত্মক চার্জের শক্তি অটুট রাখে । প্রতি মুহুর্তে সারা পৃথিবীতে এক সঙ্গে প্রায় ১৮০০ বজ্রঝড় বিদ্যুৎ চমকের মাধ্যমে পৃথিবীর ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ বজায় রাখে ।
  7. সারিবদ্ধ বজ্রঝড়ঃ বজ্রঝড় মূলত এককভাবে সংঘটিত হলেও কখনও কখনও বসন্তকালের শেষে বা গ্রীষ্মকালের প্রথমে কয়েকশত কিলোমিটার দীর্ঘ বজ্রঝড়ের সারি সৃষ্টি হয় । এরা মূলত উত্তর-দক্ষিণে বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বিস্তার লাভ করে । একক বজ্রঝড়ের তুলনায় সারিবদ্ধ বজ্রঝড়ের প্রচন্ডতা বেশী হয় । সারিবদ্ধ বজ্রঝড় উপস্থিত হওয়ার কিছু সময় আগে থেকেই অবিরাম বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে ও সেইসাথে প্রবল বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে । সারিবদ্ধ বজ্রঝড়ের স্থায়িত্ব ৬-১৮ ঘণ্টা ও বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটার / ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে ।

শ্রেণীবিভাগঃ  

উষ্ণ-আর্দ্র বায়ুর উত্থান ও উৎপত্তিগত  দিক দিয়ে বজ্রঝড় মূলত দুই প্রকার । যথা – ১. বায়ুপুঞ্জস্থ বজ্রঝড়২. সীমান্ত বজ্রঝড় । নীচে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হল

বায়ুপুঞ্জস্থ বজ্রঝড়ঃ 

উষ্ণমণ্ডলে এরূপ বজ্রঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে । বায়ুর উষ্ণতা ও আর্দ্রতা মোটামুটি একই ধরনের হয় বলে এইসব অঞ্চলে কেবল একপ্রকারের বায়ুপুঞ্জের মধ্যে বিভিন্ন অংশে তাপীয় পার্থক্যের ফলে এই বায়ুপুঞ্জস্থ বজ্রঝড় সৃষ্টি হয় ।বায়ুপুঞ্জস্থ বজ্রঝড়কে আবার তিনভাগে বিভক্ত করা হয় । যথা –

  1. স্থানীয় বায়ুপুঞ্জস্থ বজ্রঝড়ঃ ক্রান্তীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড উত্তাপের কারণে স্থানীয়ভাবে বায়ুতে পরিচলন স্রোত সৃষ্টি হয় । এর ফলে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু ঊর্দ্ধে উঠে স্থানীয় বায়ুপুঞ্জস্থ বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হয় । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্রান্তীয় অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে এটি কালবৈশাখী নামে পরিচিত ।
  2. শৈলোৎক্ষেপজনিত বজ্রঝড়ঃ প্লবনশীল জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু তার গতিপথে উচ্চভূমি দ্বারা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে উপরে উঠে গেলে তা প্রসারিত ও শীতল হয় । এর ফলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে স্থানীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতসহ শৈলোৎক্ষেপজনিত বজ্রঝড় সংঘটিত হয় ।
  3. উঁচু আকাশের বজ্রঝড়ঃ উঁচু অক্ষাংশ থেকে উষ্ণ বায়ুপ্রবাহের নিম্নগমন ও নিম্ন উচ্চতা থেকে শীতল বায়ুপ্রবাহের উপরে ওঠার পরে উচ্চতাভেদে উষ্ণতার পতনের হার বৃদ্ধি পায় । ফলে বৃষ্টিপাতসহ বজ্রঝড় সৃষ্টি হয় ।

সীমান্তজনিত বজ্রঝড়ঃ

উষ্ণ ও আর্দ্র হালকা বায়ুপ্রবাহ কোনও শুষ্ক ভারী ও শীতল বায়ুপ্রবাহের উপরে উঠলে সেই উষ্ণ ও শীতল সীমান্ত বরাবর বৃষ্টিপাতসহ এইপ্রকার বজ্রঝড় সৃষ্টি হয় ।বায়ুপুঞ্জস্থ বজ্রঝড়কে আবার তিনভাগে বিভক্ত করা হয় । যথা –

  1. শীতল সীমান্তজনিত বজ্রঝড়ঃ নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের শীতল সীমান্ত বরাবর বায়ুপ্রবাহ দ্রুতবেগে ধাবমান হলে এর সীমান্ত বরাবর বায়ুমন্ডলে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়ে অনতিবিলম্বে শক্তিশালী বজ্রঝড় গঠিত হয় ।
  2. উষ্ণ সীমান্তজনিত বজ্রঝড়ঃ উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু উষ্ণ সীমান্ত বরাবর শীতল বায়ুর উপরে ক্রমশ উঠতে থাকলে হালকা বৃষ্টিপাতসহ বজ্রঝড় সৃষ্টি হয় । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এইপ্রকার বজ্রঝড়  শীতল সীমান্তজনিত বজ্রঝড় অপেক্ষা মৃদু প্রকৃতির হয় ।
  3. প্রাক-সীমান্ত বজ্রঝড়ঃ অনেক সময় শীতল সীমান্তের কয়েক কিলোমিটার পূর্বে একটি সংকীর্ণ বলয় দেখা যায় । এই বলয়ে অবস্থিত বজ্রঝড় কোষগুলির সমন্বয়ী রেখা বরাবর ঊর্দ্ধগামী উষ্ণ বায়ু পরিচলন স্রোতের আকারে উপরে উঠে বৃষ্টিপাতসহ শক্তিশালী বজ্রঝড় সৃষ্টি হয়, যার বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ঘন্টায় ১৫০-২০০ কিলোমিটার অবধি হয়ে থাকে ।

অনুকূল পরিবেশের শর্তাবলীঃ

বজ্রঝড় সৃষ্টির জন্য উপযোগী অনুকূল পরিবেশের শর্তাবলী হল নিম্নরূপ

  1. বায়ুমণ্ডলের অস্থিরতাঃ বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড উষ্ণতাজনিত কারণে আর্দ্র বায়ু উষ্ণ হয়ে ঊর্দ্ধগামী হয় এবং নিম্ন বায়ুমন্ডলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যা বজ্রঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে ।
  2. উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুর সরবরাহঃ বজ্রঝড় সৃষ্টির জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুর সরবরাহ খুব  আবশ্যক । নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রচণ্ড উত্তাপ ও বিশাল জলভাগের অবস্থানের কারণে প্রচুর পরিমানে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু পরিচলন স্রোতের প্রভাবে উপরে উঠলে বিকালের দিকে প্রায়শই বজ্রঝড় সৃষ্টি হয় ।
  3. মেঘের গভীরতাঃ বজ্রঝড় সৃষ্টির জন্য কিউমুলোনিম্বাস মেঘের গভীরতা ঘনীভবন তল থেকে হিমায়ন তল পর্যন্ত হলে বজ্রঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় । পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষা ক্রান্তীয় অঞ্চলে মেঘের গভীরতা বেশী হওয়ার কারণে এই অঞ্চলে বজ্রঝড় সংঘটনের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশী হয় ।
  4. অস্থির বাতাসের উত্থানঃ উষ্ণ ও আর্দ্র জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু কোনো উচ্চভূমি দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বা বিশেষ অবস্থায় তা শীতল বায়ুর উপরে উত্থিত হলে বজ্রঝড় সৃষ্টির অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি হয় । মধ্য অক্ষাংশে শীতকালে বহু সীমান্তজনিত বজ্রঝড় সৃষ্টি হয় ।

জীবনচক্রঃ

বজ্রঝড় – এর জীবনচক্র মূলত তিনটি স্তরে বিভক্ত । যথা –

  1. প্রাথমিক স্তর (Initial Stage Or, Cumulus Stage): এটি বজ্রঝড় সৃষ্টির প্রথম পর্যায় । পাশাপাশি ভূমি বেশ উত্তপ্ত হওয়ার কারণে ভূমির উপরস্থ বায়ুতে পরিচলন স্রোত সৃষ্টি হয় । এই বায়ুতে যদি প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে তাহলে তা উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে একটি পুঞ্জমেঘ (Cumulus Cloud) সৃষ্টি হয় । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই স্তরে কেবল ঊর্দ্ধমুখী বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়, যার গতিবেগ ১৫-৩০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত হতে পারে । এই স্তরে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না ।
  2. পরিণত স্তর (Mature Stage): এই স্তরে পুঞ্জমেঘে ঘনীভবনের ফলে যে লীনতাপ সংযুক্ত হয়, তার ফলে পরিচলনের তীব্রতা অনেক বেড়ে যায় ।  এর ফলে ঊর্দ্ধমুখী বায়ুপ্রবাহের গতিবেগও বেড়ে গিয়ে ১০০-১২৫ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত হতে পারে । জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু অতি দ্রুত উপরে উঠতে থাকে বলে ঘনীভবনের প্রক্রিয়ার হারও বৃদ্ধি পেয়ে পুঞ্জমেঘটি দ্রুত ঝড়োপুঞ্জ মেঘে রূপান্তরিত  হয় । এই ঝড়োপুঞ্জ মেঘ উপরের দিকে ১২-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে । ট্রপোপজের কাছাকাছি উচ্চতায় বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয় বলে ঝড়োপুঞ্জ মেঘের উপরিভাগ পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে কামারের নেহাই – এর মত আকৃতি নেয় । পরিণত স্তরে বজ্রঝড় কোষের ব্যাস সাধারণত ১-২ কিলোমিটার হয়ে থাকে, তবে অতিকায় বজ্রঝড় কোষ সুপার সেলের (Super Cell) ব্যাস কখনও কখনও ৮-১০ কিলোমিটারও হতে পারে । এই স্তরে মেঘের প্রতিবাত পার্শ্ববরাবর প্রবল ঊর্দ্ধমুখী বায়ুপ্রবাহ এবং অনুবাত পার্শ্ববরাবর প্রবল নিম্নমুখী বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয় । এই স্তরে ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতসহ মুষলধারে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং কখনও কখনও এর সাথে শিলাবৃষ্টিও হয়ে থাকে ।
  3. বিস্তরণ স্তর (Dissipation Stage): এটি হল বজ্রঝড়ের জীবনচক্রের শেষ পর্যায় । এই স্তরে সারা মেঘে নিম্নমুখী প্রবাহ দেখা যায় এবং সারা মেঘ থেকেই বৃষ্টিপাত হতে থাকে । এই অবস্থায় ঊর্দ্ধমুখী বায়ুপ্রবাহের পরিমাণ ক্রমশ কমতে কমতে একসময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মেঘে জলীয় বাষ্পের সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায় । যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমতে কমতে একসময় সম্পূর্ণ থেমে গিয়ে বজ্রঝড়ের জীবনচক্রের পরিসমাপ্তি ঘটে ।

উপরোক্ত অংশ থেকে কোনো বিস্ময় থাকলে অবশ্যই নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রশ্নের বিষয়টি আপনার কোনো সাহায্যপ্রাপ্ত হলে আপনার বন্ধুদের কাছেও প্রশ্নের বিষয়টি শেয়ার করুন। বিষয়টি পরে অধ্যায়ন করার জন্য বা নিজের কাছে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য সরাসরি পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন ধন্যবাদ।